ঘনবস্তু কাকে বলে: যে সকল বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা তিনটি মাত্রায় রয়েছে সেইসকল বস্তুকে আমরা ত্রিমাত্রিক বস্তু হিসাবে জানি। আর এই ত্রিমাত্রিক বস্তুকেই সাধারণত ঘনবস্তু বলা হয়। অর্থাৎ, ঘনবস্তু হল ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্গত। একটি ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটি মাত্রা রয়েছে।
অন্যভাবে বলা যায়, যে সকল পদার্থ বা বস্তু কিছুটা জায়গা দখল করে থাকে এবং যাদের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা রয়েছে তাদের ঘনবস্তু বলা হয়। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ধরণের ঘনবস্তুর সঙ্গে পরিচিত। কয়েকটি ঘনবস্তুর উদাহরণ হল – চেয়ার, টেবিল, আলমারি, ইট, লুড্ডোর ছক্কা, মোবাইল, পাথরের টুকরো, ফুটবল ইত্যাদি।
ঘনবস্তু কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ঘনবস্তুর মাত্রা কয়টি?
আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা ঘনবস্তু কাকে বলে, ঘনবস্তুর বৈশিষ্ট্য, ঘনবস্তু কতপ্রকার ও কি কি এবং ঘনবস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। তাই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ তারা যেন এই টিউটোরিয়ালটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে।
এই টিউটোরিয়ালটি সম্পূর্ণ পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ঘনবস্তুর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, ঘনবস্তুর মাত্রা, ঘনবস্তুর প্রকারভেদ এবং ঘনবস্তু বলতে কি বোঝায় তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
ঘনবস্তু কাকে বলে?
ঘনবস্তুর সংজ্ঞা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকে। নিম্নে ঘনবস্তুর মাত্রার কথা চিন্তা করে নিম্নলিখিত সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে।
তিন মাত্রা বিশিষ্ট যে সকল বস্তু কিছুটা স্থান দখল করে এবং যাদের ওজন আছে, সেই বস্তুকে ঘনবস্তু বলা হয়।
ত্রিমাত্রিক বস্তুকে ঘনবস্তু বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, যে সকল বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা আছে এবং কিছুটা স্থান দখল করে থাকে তাকে ঘনবস্তু বলা হয়।
ঘনবস্তুর উদাহরণ:
কয়েকটি ঘনবস্তুর উদাহরণ হল – চেয়ার,টেবিল, আলমারি, ইট, লুড্ডোর ছক্কা, মোবাইল, পাথরের টুকরো, ফুটবল ইত্যাদি ঘনবস্তুর উদাহরণ।
ঘনবস্তু কতপ্রকার ও কি কি?
ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটি মাত্রাই রয়েছে, তাই ঘনবস্তু ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্গত। ঘনবস্তুর আকৃতি ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ঘনবস্তুকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা:-
- সুষম ঘনবস্তু
- বিষম বা অসম ঘনবস্তু
নিম্নে প্রত্যেক প্রকার ঘনবস্তুর সংজ্ঞা চিত্রসহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
সুষম ঘনবস্তু কাকে বলে?
যদি কোনো ঘনবস্তুর মধ্য দিয়ে এমন একটি সরলরেখা কল্পনা করতে পারি যার সাপেক্ষে ঘনবস্তুটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে ওই ঘনবস্তুকে সুষম ঘনবস্তু বলা হয়।
অন্যভাবে বলতে পারি, যদি কোনো ঘনবস্তুর আকৃতি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে সেই ঘনবস্তুকে সুষম ঘনবস্তু বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, গোটা ইট, ফুটবল, বই, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি সুষম ঘনবস্তুর উদাহরণ।
প্রদত্ত চিত্রে যে ঘনবস্তুগুলির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তাদের আকৃতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, প্রদত্ত চিত্রের ঘনবস্তুগুলি সুষম ঘনবস্তুর উদাহরণ।
অসম ঘনবস্তু কাকে বলে?
যদি কোনো ঘনবস্তুর মধ্য দিয়ে এমন কোনো সরলরেখা কল্পনা করতে না পারি, যার সাপেক্ষে ঘনবস্তুটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে ওই ঘনবস্তুকে বিষম বা অসম ঘনবস্তু বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, যদি কোনো ঘনবস্তুর আকৃতির মধ্যে কোন মিল না থাকে অর্থাৎ বাইরের আকৃতি এবড়োখেবড়ো হয়, সে সমস্ত ঘনবস্তুকে অসম ঘনবস্তু বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, পাথরের টুকরো, ভাঙা ইটের টুকরো, কয়লা, ভাঙ্গা কাঁচ ইত্যাদি অসম ঘনবস্তুর উদাহরণ।
ঘনবস্তুর মাত্রা
ইতিমধ্যেই আমরা ঘনবস্তুর সংজ্ঞা ও ঘনবস্তুর প্রকারভেদগুলি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি এখন আমরা ঘনবস্তুর মাত্রা কয়টি ও কি কি? তা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।
মাত্রা বলতে সাধারণত কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা কে বোঝায়। যেকোনো ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটিই রয়েছে সুতরাং ঘনবস্তুর মাত্রা তিনটি।
উধারণস্বরূপ, ইট হল একটি ঘনবস্তু। ইটকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে ইটের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটি রয়েছে। সুতরাং ইটের মাত্রা তিনটি।
ঘনবস্তুর বৈশিষ্ট্য
ত্রিমাত্রিক বস্তুকে সাধারণত ঘনবস্তু বলা হয়। ঘনবস্তুর বিষয়ে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হলে ঘনবস্তুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। নিম্নে ঘনবস্তুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট তুলে ধরা হল –
- সকল ঘনবস্তুই ত্রিমাত্রিক। অর্থাৎ, যেকোনো ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটেই থাকে।
- ঘনবস্তু সর্বদা কিছুটা স্থান দখল করে থাকে। অর্থাৎ, ঘনবস্তুর আয়তন নির্ণয় করা যায়।
- ঘনবস্তু নিরেট অথবা ফাঁফা উভয় হতে পারে।
- প্রত্যেক ঘনবস্তুর এক অথবা একাধিক তল, প্রান্তরেখা ও শীর্ষবিন্দু থাকতে পারে।
- প্রত্যেক ঘনবস্তুর কিছু ভর থাকে।
- ঘনবস্তুর তলগুলি সমতল অথবা বক্রতল উভয় হতে পারে।
ঘনবস্তুর ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র
নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ঘনবস্তুর ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রগুলি তুলে ধরা হল।
ঘনবস্তু | সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল |
আয়তঘন | 2(lb+bh+hl), এখানে, l = দৈর্ঘ্য, b = প্রস্থ এবং h = উচ্চতা। |
ঘনক | 6a^2, এখানে a = বাহুর দৈর্ঘ্য |
চোঙ | 2πr(h+r), এখানে r = ব্যাসার্ধ, h = উচ্চতা |
শঙ্কু | πr(l+r), এখানে r = ব্যাসার্ধ, l = তীর্যক উচ্চতা |
ঘনবস্তুর আয়তন নির্ণয়ের সূত্র
নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ঘনবস্তুর আয়তন নির্ণয়ের সূত্রগুলি তুলে ধরা হল।
ঘনবস্তু | আয়তন |
আয়তঘন | l✕b✕h ঘনএকক, এখানে, l = দৈর্ঘ্য, b = প্রস্থ এবং h = উচ্চতা। |
ঘনক | a ✕ a ✕ a = a^3 ঘনএকক, এখানে a = বাহুর দৈর্ঘ্য |
চোঙ | πr^2h ঘনএকক, এখানে r = ব্যাসার্ধ, h = উচ্চতা |
শঙ্কু | 1/3✕πr^2h ঘনএকক, এখানে r = ব্যাসার্ধ, h = উচ্চতা |
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ঘনবস্তু কাকে বলে?
উত্তরঃ যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে এবং কিছুটা জায়গা দখল করে থাকে তাকে ঘনবস্তু বলা হয়।
প্রশ্নঃ সুষমঘনবস্তু কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সব ঘনবস্তুর বাইরের আকৃতি সামঞ্জস্যপূর্ণ তাদের সুষম ঘনবস্তু বলা হয়।
প্রশ্নঃ ঘনবস্তুর মাত্রা কয়টি?
উত্তরঃ ঘনবস্তুর মাত্রা ৩টি।
আরও পড়ুনঃ