দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে: পূর্ণ ধারণা ও উদাহরণ

দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে: দশমিক ভগ্নাংশ আমরা ওই সমস্ত ভগ্নাংশগুলিকে বলে থাকি যে ভগ্নাংশগুলি কে ১০ অথবা ১০ এর ঘাতে লেখা যায়। অর্থাৎ, যে সকল ভগ্নাংশের হরে ১০, ১০০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০,… ইত্যাদি সংখ্যা থাকে, তাদের দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ১/১০, ১/১০০, ২/১০০০, ১/১০০০, ৩/১০,… ইত্যাদি দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ। আমরা এই ভগ্নাংশের সরলীকরণ করে ০.১, ০.০১, ০.০০২, ০.০০১, ০.৩,… দশমিকের আকারে প্রকাশ করতে পারি।

সাধারণ ভগ্নাংশের তুলনায় দশমিক ভগ্নাংশে প্রকাশ করে ভগ্নাংশের যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করা অনেক সহজ।

দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে: পূর্ণ ধারণা ও উদাহরণ

আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে, দশমিক ভগ্নাংশ কত প্রকার ও কি কি, সসীম দশমিক ভগ্নাংশ, অসীম দশমিক ভগ্নাংশ, আবৃত ও অনাবৃত দশমিক ভগ্নাংশ, শুদ্ধ ও মিশ্র আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই তোমরা অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি ভালোভাবে পড়বে।

দশমিক ভগ্নাংশ কি?

দশমিক ভগ্নাংশকে ইংরেজিতে বলা হয় Decimal Fraction. যে ভগ্নাংশগুলির হরে ১০ অথবা ১০ এর ঘাতে সংখ্যা থাকে তাদের দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। অর্থাৎ দশমিক ভগ্নাংশের হরে সর্বদা ১০, ১০০, ১০০০, ১০০০,.. ইত্যাদি সংখ্যাগুলি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২/১০ একটি দশমিক ভগ্নাংশ। কারণ ২/১০=০.২ অর্থাৎ ২/১০ দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক ম্যান = ০.০২.

দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

দশমিক ভগ্নাংশের সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দিয়ে থাকে। নিম্নে দশমিক ভগ্নাংশের সংজ্ঞা আলোচনা করা হল।

দশমিক ভগ্নাংশ হল ওই সমস্ত ভগ্নাংশ যাদের হর সর্বদা ১০ অথবা ১০এর ঘাত হয়। যেমন : ১৪/১০০, ১/১০০, ২/১০০০,…. ইত্যাদি দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

যে সব ভগ্নাংশের হর সর্বদা ১০ অথবা ১০ এর গুণিতক হয়। সেই সব ভগ্নাংশকে দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়।

দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ?

নিম্নে দশমিক ভগ্নাংশের কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হল –

  • ১/০০, ৭/১০০, ৩৪/১০০, ২৩৪/১০০০,… ইত্যাদি দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।
  • ০.২, ০.০২৩, ০.২৫, ০.১২৫, ০.৩৭৫,… ইত্যাদি দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।
  • সুদের হার ২.৫% দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।
  • আমার মোটরসাইকেলে প্রতি ঘন্টায় ০.৮৫ লিটার পেট্রল খরচ হয়।

দশমিক ভগ্নাংশ কত প্রকার ও কি কি?

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে। এখন আমরা জানবো দশমিক ভগ্নাংশ কত প্রকার ও কি কি ? দশমিক ভগ্নাংশ গুলিকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়।

যথা –

  • সসীম দশমিক ভগ্নাংশ এবং
  • অসীম দশমিক ভগ্নাংশ।

সসীম দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

যদি কোনো দশমিক ভগ্নাংশের দশমিকের পরে সসীম সংখ্যক সংখ্যা থাকে, তবে সেই ভগ্নাংশ গুলিকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ০.২৫, ০.১২৫, ০.৬২৫, ০.০২৫,… ইত্যাদি সসীম দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

অসীম দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

যদি কোনো দশমিক ভগ্নাংশের দশমিকের পরে অসীম সংখ্যক সংখ্যা থাকে, তবে সেই ভগ্নাংশ গুলিকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ০.২৫২৩৫৬৭….., ০.১২৫৩৪৫৫৫৫৫৫৫৫…., ০.৬২৫২৫২৫২৫২৫২৫….., ০.৩৩৩৩৩৩…., ০.৬৬৬৬…, .. ইত্যাদি অসীম দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

অসীম দশমিক ভগ্নাংশ গুলিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

  • আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ এবং
  • অনাবৃত দশমিক ভগ্নাংশ।
আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

যে সব দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর ডানদিকে এক বা একাধিক অঙ্ক বারবার পর্যায়ক্রমে অসীম পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি হয়। সেই ভগ্নাংশ গুলিকে আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ বা পৌনঃপুনিক দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ০.৩৩৩৩…, ০.৬৬৬৬৬৬৬…., ০.১২৩৪৩৪৩৪.., ইত্যাদি আবৃত দশমিক বা পৌনঃপুনিক দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

আবৃত দশমিক ভগ্নাংশকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

  • শুদ্ধ আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ এবং
  • মিশ্র আবৃত ভগ্নাংশ।
শুদ্ধ আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

যে সব আবৃত্ত দশমিক, দশমিক বিন্দুর পরেই শুরু হয় তাদের শুদ্ধ আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন : ০.৩৩৩…, ০.৬৬৬…, ইত্যাদি শুদ্ধ দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

মিশ্র আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

যে সব আবৃত দশমিক, দশমিক বিন্দুর পরে শুরু না হয়ে এক বা একাধিক অঙ্ক বাদ রেখে শুরু হয়, তাদের মিশ্র আবৃত দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন : ০.৪৩৩৩৩৩…, .২৩৪৪৪৪৪৪….,… ইত্যাদি মিশ্র আবৃত দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

অনাবৃত দশমিক ভগ্নাংশ কাকে বলে?

যে সব দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর ডানদিকে একটা অঙ্কের ও বারবার পুনরাবৃত্তি হয় না, সেই ভগ্নাংশ গুলিকে অনাবৃত দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমনঃ ০.২৩৪৫৬৭৮৬৫…, ০.৫৪৩৪৬৭৮২…., .. ইত্যাদি অনাবৃত দশমিক ভগ্নাংশের উদাহরণ।

দশমিক ভগ্নাংশের বৈশিষ্ট্য

দশমিক ভগ্নাংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হল –

  • দুই বা দুই এর বেশি দশমিক ভগ্নাংশকে আলাদা আলাদা ক্রমে গুন্ করলেও গুণফলের কোনো পরিবর্তন হয় না।
  • কোনো দশমিক ভগ্নাংশকে ১ দ্বারা গুণ করা হলে, গুণফলটি নিজেই দশমিক ভগ্নাংশ হবে।
  • যদি একটি দশমিক ভগ্নাংশকে 0 দ্বারা গুণ করা হয়, তবে গুনফল সর্বদা শূন্য (০) হবে।
  • কোনো দশমিক সংখ্যাকে ১ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফলটি দশমিক সংখ্যা হবে।
  • কোনো দশমিক সংখ্যাকে একই সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল ১ হয়।
  • ০ কে যেকোন দশমিক দিয়ে ভাগ করা হোক না কেন ভাগফল সর্বদা ০ হবে।

দশমিক ভগ্নাংশের যোগ করার নিয়ম?

দশমিক ভগ্নাংশের সংজ্ঞা অনুযায়ী, দশমিক ভগ্নাংশের হরে সর্বদা ১০, ১০০, ১০০০, ১০০০০,… ইত্যাদি সংখ্যাগুলি থাকে। দশমিক ভগ্নাংশগুলিকে আমরা ২ টি উপায়ে যোগ করতে পারি। দশমিক ভগ্নাংশের যোগ করার নিয়ম দুটি হল –

  • দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক ম্যান নির্ণয় করে যোগ।
  • দশমিক ভগ্নাংশগুলিকে সমহর ভগ্নাংশে রূপান্তর করে যোগ।

দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক মান নির্ণয় করে যোগ।

দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক মান নির্ণয় করে যোগ করার জন্য নিচে দেওয়া ধাপগুলি অনুসরণ করুন।

  • প্রথমে যে ভগ্নাংশগুলির যোগ করতে বলা হয়েছে, সেগুলির দশমিক মান নির্ণয় করবে।
  • তারপর দশমিক বিন্দুর সামনে দশমিক বিন্দু বসিয়ে ডানে বামে সংখ্যা বসিয়ে যোগ করুন।

উদাহরণ: ২/১০ + ২৫/১০০ = ?

উত্তর: প্রথমে ভগ্নাংশ দুটির দশমিক মান বের করবে।

২/১০ = ০.২ এবং ২৫/১০০ = ০.২৫।

তারপর মান দুটির যোগ করতে হবে।

০.২ + ০.২৫ = ০.৪৫ = ৪৫/১০০।

সুতরাং, ২/১০ ও ২৫/১০০ এর যোগফল = ০.৪৫ = ৪৫/১০০.

দশমিক ভগ্নাংশগুলিকে সমহর ভগ্নাংশে রূপান্তর করে যোগ।

দশমিক ভগ্নাংশগুলিকে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রূপান্তর করে যোগ করার জন্য নিচে দেওয়া ধাপগুলি অনুসরণ করুন।

  • প্রথমে হর গুলির লসাগু করুন।
  • তারপর প্রত্যেক ভগ্নাংশের হর দিয়ে লসাগু কে ভাগ করুন।
  • তারপর ভাগফল দিয়ে ভগ্নাংশটির লব ও হর কে গুন্ করলে সমহর ভগ্নাংশে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
  • তারপর হরে লসাগু এবং লবে লবগুলিকে যোগ করে লিখতে হবে।

প্রশ্নঃ ২/১০ + ২৫/১০০ এর মান নির্ণয় করো?

উত্তরঃ প্রথমে হরগুলির লসাগু করুন।

১০ ও ১০০ এর লসাগু =১০০.

তারপর প্রথম ভগ্নাংশের হর দিয়ে লস্যাগুকে ভাগ করলে ১০ এবং দ্বিতীয় ভগ্নাংশের হর দিয়ে ভাগ করলে ১ পাওয়া যায়। তাই প্রথম ভগ্নাংশের উপর নিচে ১০ দিয়ে এবং দ্বিতীয় ভগ্নাংশের উপর নিচে ১ দিয়ে গুন্ করুন।

২/১০ = (২х১০)/(১০х১০) = ২০/১০০ এবং

২৫/১০০ = (২৫х১)/(১০০х১) = ২৫/১০০.

সুতরাং, ২/১০ + ২৫/১০০

= ২০/১০০ + ২৫/১০০।

অবশেষে নিচে লসাগু এবং উপরে লব দুটির যোগফল লিখবে।

(২০+২৫)/১০০ = ৪৫/১০০

দশমিক ভগ্নাংশের বিয়োগ

দুই বা ততোধিক দশমিক ভগ্নাংশের বিয়োগ করার জন্য নতুন কিছু করার প্রয়োজন নেই। বিয়োগ যোগের নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে শুধুমাত্র যোগ চিহ্নের জায়গায় বিয়োগের চিহ্ন বসাতে হবে।

দশমিক ভগ্নাংশের গুণ

দশমিক ভগ্নাংশের গুণ, দশমিক ভগ্নাংশের যোগ ও বিয়োগের তুলনায় সহজ। দশমিক ভগ্নাংশের গুণ করার জন্য নিচে দেওয়া ধাপগুলি অনুসরণ করুন।

  • প্রথমে হর গুলিকে গুণ করে হরে লিখুন অথবা ০ এর সংখ্যা গণনা করে ১ এর পরে ততগুলি শূন্য বসিয়ে দিবে।
  • তারপর লব কে লবের সঙ্গে গুন্ করে লবে লিখবে।

উদাহরণ: ২/১০ х ১১/১০০ = (২х১১)/(১০х১০০) = ২২/১০০০

দশমিক ভগ্নাংশের ভাগ

দশমিক ভগ্নাংশের ভাগ ও গুনের মতো যোগ ও বিয়োগের তুলনায় সহজ। দশমিক ভগ্নাংশের ভাগ করার জন্য নিচে দেওয়া ধাপগুলি অনুসরণ করুন।

  • প্রথমে ভাগ আকারে লিখবে।
  • তারপর সমান দিয়ে প্রথম ভগ্নাংশ কে লিখবে।
  • তারপর ভাগ চিহ্নের জায়গায় গুনের চিহ্ন লিখবে।
  • তারপর দ্বিতীয় ভগ্নাংশের লব ও হর এর স্থান বিনিময় করবে।
  • তারপর গুনের নিয়ম মেনে কাজ করলে ভাগ করা হয়ে যাবে।

উদাহরণস্বরূপ, ৩৪/১০০ ÷ ২/১০০ = ৩৪/১০০ ✕১০০/২ = ১৭

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment