বক্ররেখা কাকে বলে: বক্ররেখা হল একমাত্রিক জ্যামিতিক চিত্র যার কেবলমাত্র দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু প্রস্থ ও উচ্চতা নেই। এটি হল রেখার এক প্রকারভেদ যা সর্বদা বাঁকা পথে চলে। অর্থাৎ, বক্র রেখা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময় সর্বদা দিক পরিবর্তন করে।
অন্যভাবে বলতে পারি, জ্যামিতিতে বক্ররেখা হল এমন এক ধরণের রেখা যা সমতলে মসৃন ভাবে বাঁক বা চাপের মাধ্যমে অঙ্কন করা হয়। অর্থাৎ, বক্র রেখাগুলি এমন একধরণের রেখা যাদের মধ্যে বেশকিছু বাঁক রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ফুটবলের উপরে একটি পেন্সিল দিয়ে দাগ দিলে যে রেখাটি পাওয়া যায় সেটি একটি বক্ররেখার উদাহরণ। এই রেখাটি কে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে রেখাটি সর্বদা বাঁকা পথে চলে।
বক্ররেখা কাকে বলে – বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও চিত্রসহ সংজ্ঞা
আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা বক্ররেখার সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদে ও বক্র রেখার চিত্র অঙ্কন করার নিয়মগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
তাই এই টিউটোরিয়ালটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই টিউটোরিয়ালটি সম্পূর্ণ পড়ার পরে শিক্ষার্থীরা বক্ররেখার সংজ্ঞা, বিভিন্ন প্রকারের বক্ররেখা ও তার চিত্রসহ সংজ্ঞা, বক্র রেখার বৈশিষ্ট্য এবং সরলরেখা ও বক্ররেখার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন ও বক্র রেখা সম্পর্কিত সব ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে দিতে পারবে।
বক্ররেখা বলতে কি বোঝায় ?
বক্ররেখা কে ইংরেজিতে Curved Line বলা হয়। Curve কথার অর্থ হল “বক্র” ও line এর অর্থ হল রেখা। সুতরাং Curved Line এর বাংলা অর্থ হল বক্ররেখা। অর্থাৎ যে রেখাগুলি এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যাওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ আঁকাবাঁকা পথে চলে তাদের বক্ররেখা বলা হয়।
বক্র রেখা বলতে আমরা কেবলমাত্র ওই সমস্ত রেখাকে জানি যে রেখাগুলি সর্বদা আঁকাবাঁকা পথে চলে। অর্থাৎ যে রেখাগুলিকে অঙ্কন করার জন্য বার বার দিক পরিবর্তন করতে হয়। বক্র রেখাকে আমরা এইভাবে বুঝতে পারি, একটি কাগজের উপরে কলম না তুলে বক্র রেখা অঙ্কন করা যায়।
কিন্তু আপনি কি জানেন বক্ররেখা চলার পথ সোজা এবং বাঁকা উভয় হতে পারে। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বক্ররেখার চলার পথ আবার সোজা কিভাবে হয় ?
এর উত্তর হিসাবে আমরা বলতে পারি, যদি একটি বক্ররেখার বক্রতা শূন্য হয় তখন সেটি সরলরেখার আকার ধারণ করে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, সব সরলরেখায় বক্ররেখা কিন্তু সব বক্ররেখা সরলরেখা নয়।
বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা একটি চিত্রের ব্যবহার করবো।
প্রদত্ত চিত্রে A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে যাওয়ার জন্য আমরা ৫টি পথ অঙ্কন করেছি। প্রতিটি পথ এক একটি রেখা, সরলরেখা অথবা বক্র রেখা হতে পারে।
এখন চিত্রটি কে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ১, ২, ৪ ও ৫ নম্বর পথ দিয়ে A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে যাওয়ার সময় আমাদের প্রায় দিক পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু ৩ নম্বর পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করতে হয় না।
সুতরাং, ১, ২, ৪ ও ৫ নম্বর পথগুলি বক্র রেখা এবং ৩ নম্বর পথটি একটি সরল রেখার উদাহরণ।
আরও দেখা যায় ৩ নম্বর পথের বক্রতা শূন্য। সুতরাং সরলরেখাগুলিকে বক্ররেখা বলা যায় কিন্তু বক্র রেখা গুলি সরল রেখা নয়।
বক্ররেখা কাকে বলে?
যে রেখা কে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দিক পরিবর্তন করতে হয় তাকে বক্ররেখা বলে।
অন্যভাবে বলতে পারি, যে রেখাগুলি একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময় আঁকাবাঁকা পথে চলে তাদের বক্র রেখা বলা হয়।
প্রদত্ত চিত্রে CD একটি বক্ররেখার উদাহরণ।
বক্ররেখার উদাহরণ:
- একটি ফুটবলের উপরে একটি পেন্সিল দিয়ে দাগ দিলে যে রেখাটি পাওয়া যায় সেটি একটি বক্ররেখার উদাহরণ। এই রেখাটি কে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে রেখাটি সর্বদা বাঁকা পথে চলে।
- একটি ঢেউ খেলানো টিনের উপরে একটি পেন্সিল দিয়ে দাগ দিলে যে রেখা পাওয়া যায় সেটিও একটি বক্ররেখার উদাহরণ।
বক্ররেখার বৈশিষ্ট্য
নিম্নে বক্ররেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল –
- বক্ররেখা হল রেখার একটি প্রকারভেদ।
- বক্র রেখা সর্বদা আঁকাবাঁকা পথে চলে।
- বক্র রেখার কোনো প্রান্ত বিন্দু নেই।
- একটি বিন্দু দিকে অন্য বিন্দুতে যাওয়ার সময় বারবার দিক পরিবর্তন করে।
- দুটি বক্ররেখা একেঅপর কে অসংখ্য বিন্দুতে ছেদ করে।
- দুটি বিন্দু দিয়ে অসংখ্য সরলরেখা অঙ্কন করা যায়।
- বক্র রেখার বক্রতা শূণ্য হলে তাকে সরলরেখা বলা হয়।
বক্ররেখা কত প্রকার ও কি কি?
বক্ররেখাগুলিকে তাদের আকৃতি, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বক্ররেখার কয়েকটি প্রকারভেদ নিম্নে তুলে ধরা হল-
- সরল বক্ররেখা
- অ-সরল বক্ররেখা
- খোলা বক্ররেখা
- বদ্ধ বক্ররেখা
- ঊর্দ্ধগামী বক্র রেখা
- নিম্নগামী বক্ররেখা
- বীজগাণিতিক বক্ররেখা।
এছাড়াও বক্ররেখার বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন : পরাবৃত্তীয় বক্ররেখা, দ্বিঘাত বক্ররেখা, ঘন বক্ররেখা,অধিবৃত্তাকার বক্ররেখা, তুরীয় বক্র রেখা,…. ইত্যাদি। নিম্নে এইরকম বেশকিছু বক্ররেখার চিত্র সহকারে সংজ্ঞা নিম্নে তুলে ধরা হল।
সরল বক্ররেখা (Simple Curve)
যে সকল বক্ররেখ্যার প্রান্তবিন্দু দুটি দিক পরিবর্তন করলেও একেঅপরকে ছেদ বা অতিক্রম করে না সেই সমস্ত বক্ররেখাকে সরল বক্ররেখা বা Simple Curve বলা হয়।
সরল বক্ররেখা গুলি দুই প্রকার। যথা :
- সরল খোলা বক্ররেখা
- সরল বন্ধ বক্ররেখা।
অ-সরল বক্ররেখা (Non -simple curve)
যে সকল বক্ররেখ্যার প্রান্তবিন্দু দুটি দিক পরিবর্তন করার সাথে সাথে একেঅপরকে ছেদ বা অতিক্রম করে সেই সমস্ত বক্ররেখাকে অ-সরল বক্ররেখা বা Non-Simple Curve বলা হয়।
অর্থাৎ সরল বক্ররেখার বিপরীত হল অ-সরল বক্ররেখা। অ-সরল বক্ররেখা গুলি দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা :
- অ-সরল খোলা বক্ররেখা ও
- অ-সরল বন্ধ বক্ররেখা।
খোলা বক্ররেখা (Open Curve)
যে সকল বক্ররেখাগুলির প্রান্তবিন্দু দুটি মিলিত হয় না তাদের খোলা বক্ররেখা বলা হয়।
এই বক্ররেখাগুলির starting point ও ending point আলাদা হয় এবং একটি খোলা বক্ররেখা নিজের মধ্যে কোনো এলাকাকে আবদ্ধ করে না।
খোলা বক্ররেখার অন্যতম উদাহরণ হল অধিবৃত্ত।
বদ্ধ বক্ররেখা (Closed Curve)
যে সকল বক্ররেখাগুলির প্রান্তবিন্দু দুটি মিলিত হয় তাদের বদ্ধ বক্ররেখা বলা হয়।
এই বক্ররেখাগুলির starting point ও ending point একই হয় এবং একটি বদ্ধ বক্ররেখা নিজের মধ্যে একটি এলাকাকে আবদ্ধ করে।
বদ্ধ বক্ররেখার অন্যতম উদাহরণ হল বৃত্ত এবং উপবৃত্ত।
ঊর্দ্ধগামী বক্ররেখা কাকে বলে ?
যদি কোনো বক্ররেখার প্রান্তবিন্দু দুটি উপরের দিকে বাঁক নিয়ে থাকে তবে সেটিকে ঊর্দ্ধগামী বক্ররেখা বলা হয়।
নিম্নগামী বক্ররেখা কাকে বলে ?
যদি কোনো বক্ররেখার প্রান্তবিন্দু দুটি উনিচের দিকে বাঁক নিয়ে থাকে তবে সেটিকে নিম্নগামী বক্ররেখা বলা হয়।