মূলদ সংখ্যা কাকে বলে : মূলদ সংখ্যা গণিতের একটি মৌলিক ধারণা যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রয়োগ রয়েছে। মূলদ সংখ্যা হল বাস্তব সংখ্যার একটি অংশ , যাকে দুটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত আকারে লেখা যায়। যেমন : ভগ্নাংশ, যেখানে ভগ্নাংশের লব এবং হর উভয় পূর্ণসংখ্যা।
আজকের টিটোরিয়ালে আমরা মূলদ সংখ্যার সম্মদ্ধে যে বিষয়গুলি জানবো সেগুলি নিম্নে তুলে ধরা হল –
- মূলদ সংখ্যা কি ?
- মূলদ সংখ্যা কাকে বলে ?
- মূলদ সংখ্যার বৈশিষ্ট্য ,
- সমতুল্য মূলদ সংখ্যা বলতে কি বোঝো।
- ০ কি মূলদ সংখ্যা ?
- দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে একটি মূলদ সংখ্যা বের করার নিয়ম।
- দুটি মূলদ সংখ্যার মাঝে অসংখ্য মূলদ সংখ্যা নির্ণয় করার উপায় ?
এছাড়া ও অনেক তথ্য আজকের টিউটোরিয়ালে তুলে ধরা হবে। সেহেতু আমি তোমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার রেকুয়েস্ট করছি।
মূলদ সংখ্যা কাকে বলে – দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে মূলদ সংখ্যা বের করার নিয়ম।
মূলদ সংখ্যা কি ?
মূলদ সংখ্যার ইংরেজি হল রাশনাল নাম্বার (Rational Number). এই Rational শব্দটি ‘ratio’ (অনুপাত ) শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে যার বাংলা অর্থ অনুপাত।
আর আমরা অনুপাত বলতে বুঝি দুটি সমজাতীয় রাশির মধ্যে তুলনা করা , যাকে আমরা ভগ্নাংশ হিসাবেও জানি। অর্থাৎ মূলদ সংখ্যাগুলি ভগ্নাংশের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত যা অনুপাতের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।
অন্য ভাবে বলা যায় , যদি একটি সংখ্যাকে ভগ্নাংশ হিসাবে লেখা যায় যেখানে লব ও হর উভয়েই পূর্ণসংখ্যা হয়। তবে এই সংখ্যাটি একটি মূলদ সংখ্যা হবে।
যেমন : ২ একটি সংখ্যা যাকে ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করলে ২/১ হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় লব ২ এবং হর ১ উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা। সেহেতু আমরা বলতে পারি ২ একটি মূলদ সংখ্যা।
Also Read : স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে – Natural Numbers in Bengali
মূলদ সংখ্যা কাকে বলে – Definition of rational number
মূলদ সংখ্যার সংজ্ঞা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকে। তারমধ্যে কিছু সংখ্যা নিম্নে তুলে ধরা হল –
যে সব সংখ্যা কে ভগ্নাংশ আকারে লেখা যায়, তাদের মূলদ সংখ্যা বলা হয়। যেমন : ৩, ২/৩, ৩/৪, ৫/৯,… ইত্যাদি ভগ্নাংশ সংখ্যা গুলি মূলদ সংখ্যা।
যে সকল সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে p, q উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা এবং q ≠ 0 ,তাদের মূলদ সংখ্যা বলা হয়।
উদাহরণঃ ২, ৩, -৪, -৫, ২/৩, ৭/৫, ২.৩, … ইত্যাদি মূলদ সংখ্যার উদাহরণ।
মূলদ সংখ্যার উদাহরণ – Examples of rational numbers
সকল স্বাভাবিক সংখ্যা ,অখন্ড সংখ্যা এবং পূর্ণ সংখ্যাগুলি, এমনকি ভগ্নাংশ সংখ্যাগুলিও মূলদ সংখ্যার মধ্যে আসে। সসীম দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যা এবং আবৃত দশমিক সংখ্যাগুলিও মূলদ সংখ্যা। নিম্নে মূলদ সংখ্যার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হল –
- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ..,.. (স্বাভাবিক সংখ্যা )
- ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮,..,.. (অখন্ড সংখ্যা)
- .., -৩, -২, -১, ০, , ২, ৩, .. (অখন্ড সংখ্যা )
- ১/২ = ০.৫ (সসীম দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যা)
- ০.৩৩৩….., ০.৬৬৬…. (আবৃত দশমিক সংখ্যা)
মূলদ সংখ্যার সেট
মূলদ সংখ্যার সেট কে ইংরেজি বড়ো অক্ষরের Q দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। মূলদ সংখ্যার সেট এর মধ্যে ওই সমস্ত সংখ্যা আসে , যাদের দুটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাতে লেখা যায়।
Q = { ৩, ৪. ৫. ০.৩৩৩, ০.৬৬৬৬, -৩, -২, -৫, ২/৫, ৭/১০,…}.
সমতুল্য মূলদ সংখ্যা কাকে বলে ? – Equivalent rational numbers
সমতুল্য মূলদ সংখ্যা কাকে বলে , তা আমরা একটা উদাহরণের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো। ধরি ২/৩ একটি মূলদ সংখ্যা। এখন আমরা ২/৩ এর সমতুল্য মূলদ সংখ্যা নির্ণয় করবো।
২/৩ এর সমতুল্য মূলদ সংখ্যা নির্ণয় করার জন্য, ২/৩ এর লব এবং হর উভয়ই কে যথাক্রমে ২, ৩, ৪, ৫,.. ইত্যাদি সংখ্যা দিয়ে গুন্ করতে হবে।গুন্ করে যে সংখ্যাগুলি পাওয়া যাবে , সেগুলি হল ২/৩ এর সমতুল্য মূলদ সংখ্যা।
২/৩ এর লব ও হর উভয়কে ২ দিয়ে গুন্ করে পাই = ৪/৬
২/৩ এর লব ও হর উভয়কে ৩ দিয়ে গুন্ করে পাই = ৬/৯
২/৩ এর লব ও হর উভয়কে ৪ দিয়ে গুন্ করে পাই = ৮/১২
২/৩ এর লব ও হর উভয়কে ৫ দিয়ে গুন্ করে পাই = ১০/১৫
৪/৬, ৬/৯, ৮/১২, ১০/১৫, … ইত্যাদি সংখ্যাগুলিকে ২/৩ এর সমতুল্য মূলদ সংখ্যা বা Equivalent rational numbers বলা হয়।
৪/৬, ৬/৯, ৮/১২, ১০/১৫, … ইত্যাদি ভগ্নাংশগুলিকে লঘিষ্ঠ আকারে প্রকাশ করলে মূল ভগ্নাংশ ২/৩ পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সমতুল্য মূলদ সংখ্যার মানের কোনো পরিবর্তন হয়না।
Also Read: অখন্ড সংখ্যা কাকে বলে – Whole Numbers in Bangla
মূলদ সংখ্যা চেনার উপায়
মূলদ সংখ্যা চেনার জন্য নিচে দেওয়া উপায় গুলো অনুসরণ করতে পারো।
- আমরা জানি, সব স্বাভাবিক সংখ্যাই মূলদ সংখ্যা। সেহেতু স্বাভাবিক সংখ্যা হলে সেটি মূলদ সংখ্যা হবে। যেমন – ১, ২, ৬, ৬৭, ৫৬৭,,, ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা।
- সকল অখন্ড সংখ্যা সংখ্যা , সেহেতু ০, ২, ৩, ৫, ৭৮৯, ৩৪৪৬৬, ,,,, ইত্যাদি মূলদ সংখ্যার উদাহরণ।
- সকল পূর্ণসংখ্যা মূলদ সংখ্যা। যেমন – -২, -৩, -৪৫৬, ০, ২৩, ৩৪৫, … ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা।
- ভগ্নাংশ আকারে লেখা যায় এমন সংখ্যাগুলিও মূলদ সংখ্যা। যেমন – ২/৩, ৫/ ৮. ৩/১০ ,…ইদ্যাদি।
- সসীম দশমিক সংখ্যাও মূলদ সংখ্যা। যেমন – ৩.৩৪, ২.২৫,..ইত্যাদি।
- আবৃত দশমিক সংখ্যা গুলিও মূলদ সংখ্যা। যেমন – ০.২৩৩৩৩৩৩…, ০.৩৩৩৩৩৩৩…., ০.৬৬৬৬৬… ইত্যাদি
- সমস্ত পূর্নবর্গ সংখ্যা মূলদ সংখ্যা √৪, √৯, √১৬, √৬৪, √৮১, √১৪৪ ,…ইত্যাদি পূর্ণবর্গ সংখ্যাগুলি মূলদ সংখ্যা।
মূলদ সংখ্যা বের করার নিয়ম – How to find rational numbers between two rational number.
এখন আমরা জানবো দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে মূলদ সংখ্যা কিভাবে বের করতে হয়। দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে মূলদ সংখ্যা বের করার জন্য নিচে দেওয়া নিয়ম অনুসরণ করবো।
- দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে একটি মূলদ সংখ্যা বের করার নিয়ম।
- দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে অসংখ্য মূলদ সংখ্যা বের করার উপায়।
দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে একটি মূলদ সংখ্যা বের করার নিয়ম।
দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে একটি মূলদ সংখ্যা বের করার জন্য সংখ্যাদুটিকে যোগ করে ২ দিয়ে ভাগ করতে হবে।
যেমন – ধরি , x ও y দুটি মূলদ সংখ্যা ,যেখানে x < y .
অতএব, x ও y এর মাঝে অবস্থিত একটি মূলদ সংখ্যা হল = (x + y )/২.
প্রশ্নঃ ১ ও ২ এর মধ্যে একটি মূলদ সংখ্যা লেখ ?
উত্তরঃ ১ ও ২ এর মধ্যে একটি মূলদ সংখ্যা হল = (১+২)/২ = ৩/২
দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে অসংখ্য মূলদ সংখ্যা বের করার উপায়।
দুটি মূলদ সংখ্যার মধ্যে অসংখ্য মূলদ সংখ্যা বের করার জন্য নিচে দেওয়া নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
ধরি , x ও y দুটি মূলদ সংখ্যা ,যেখানে x < y.
সংখ্যারেখায় x ও y এর মাঝে n সংখ্যক মূলদ সংখ্যা হল –
(x + d), (x+2d), (x+3d),…, (x +nd). যেখানে, d = (y – x )/(n + 1)
প্রশ্নঃ ১ ও ২ এর মধ্যে দুটি মূলদ সংখ্যা লেখ ?
উত্তরঃ প্রশ্নে , x=1, y=2 এবং n=2
অতএব, d = (2-1)/(2+1) = 1/3
অতএব, ১ ও ২ এর মধ্যে দুটি মূলদ সংখ্যা হল =(1+1/3), (1+2/3) = 4/3, 5/3.
যদি মূলদ সংখ্যা বের করার এই নিয়ম টি জটিল মনে হয়। তবে আমি তোমাদের আর একটা নিয়ম বলছি। এই নিয়মটি অনুসরণ করেও অসংখ্য মূলদ সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে।
- প্রথমে যতগুলি মূলদ সংখ্যা বের করতে বলবে তার সঙ্গে এক যোগ করুন।
- তারপর যে দুটি সংখ্যার মাঝে মূলদ সংখ্যা বের করতে বলেছে। তাদের কে ওই সংখ্যা দিয়ে গুন্ করে সমতুল্য ভগ্নাংশ বের করতে হবে এবং মূলদ সংখ্যা বের হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ ৫ ও ৬ এর মাঝে ৬ টি মূলদ সংখ্যা লেখ?
উত্তর : যেহেতু , ৫ ও ৬ এর মাঝে ৬ টি মূলদ সংখ্যা লিখতে বলেছে, সেহেতু ৬ এর সঙ্গে ১ যোগ করলে হয় = ৬+১ =৭.
এখন ৫ ও ৬ এর উপর নিচে ৭ দিয়ে গুন্ করে সমতুল্য মূলদ সংখ্যা বের করলে হয় ,
৫ = ৩৫/৭ এবং ৬ = ৪২/৭.
অতএব , ৫ ও ৬ এর মাঝে ৬ টি মূলদ সংখ্যা হল – ৩৬/৭,৩৭/৭. ৩৮/৭, ৩৯/৭, ৪০/৭, ৪১/৭.
মূলদ সংখ্যার বৈশিষ্ট্য
মূলদ সংখ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হল।
- দুটি মূলদ সংখ্যার যোগফল সর্বদা মূলদ সংখ্যা হয়।
- দুটি মূলদ সংখ্যার বিয়োগফল সর্বদা মূলদ সংখ্যা হয়।
- দুটি মূলদ সংখ্যার গুনফল সর্বদা মূলদ সংখ্যা হয়।
- দুটি মূলদ সংখ্যার ভাগফল সর্বদা মূলদ সংখ্যা হয়।
মূলদ সংখ্যা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
মূলদ সংখ্যা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হল –
- মূলদ সংখ্যার সেটকে Q দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
- সকল পূর্বসংখ্যা ,অর্থাৎ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং ০ মূলদ সংখ্যা।
- দশমিক সংখ্যাগুলি ও মূলদ সংখ্যা। কারণ এদের কে p/q আকারে প্রকাশ করা যায়.
- ০ = ০/১=০/২ = p/q . অর্থাৎ ০ কে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় ,অতএব 0 একটি মূলদ সংখ্যা।
- π মূলদ সংখ্যা নয় কিন্তু π এর মান ২২/৭ এবং ৩.১৪ মূলদ সংখ্যা। কারণ এই ম্যান গুলি π এর নিকটতম মান , অরিজিনাল মান নয়।
০ কি মূলদ সংখ্যা ?
হাঁ , ০ একটি মূলদ সংখ্যা। কারণ ০ কে আমরা p/q আকারে প্রকাশ করতে পারি।
যেমন – ০ = ০/১ = p/q ,যেখানে p =০ এবং q = ১ অর্থাৎ q ≠ ০. সুতরাং ০ একটি মূলদ সংখ্যা।
π কি মূলদ সংখ্যা ?
না , π মূলদ সংখ্যা নয়। π একটি অমূলদ সংখ্যা।
মূলদ সংখ্যা কাকে বলে উদাহরণ দাও ?
যে সকল সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে p, q উভয়ই পূর্ণ সংখ্যা এবং q ≠ 0 ,তাদের মূলদ সংখ্যা বলা হয়।
উদাহরণঃ ২, ৩, -৪, -৫, ২/৩, ৭/৫, ২.৩, … ইত্যাদি মূলদ সংখ্যার উদাহরণ।
আশাকরি , মূলদ সংখ্যা কাকে বলে আর্টিকেলটি পড়ে মূলদ সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত ছোটো ছোটো বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছো। তারপর ও যদি র্যাশনাল নাম্বারস এর সঙ্গে কোনো প্রশ্ন অথবা সাজেশন থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। ধন্যবাদ। ..
Also Reads :
- অংক কাকে বলে – অংক কত প্রকার ও কি কি?
- সহকারি অংক ও সার্থক অংক কাকে বলে – সার্থক অংক কয়টি ও কি কি?
- সংখ্যা পদ্ধতি কি – সংখ্যা পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি
- দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System) কি, ইতিহাস, আবিষ্কারক এবং দশমিক সংখ্যা থেকে অন্য সংখ্যায় রুপান্তর।
- বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি কি (Binary Number System) – ইতিহাস ও আবিষ্কারক।