যোগ কাকে বলে – ধারণা, উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অংশ এবং যোগ করার নিয়ম

যোগ কাকে বলে : গণিতশাস্ত্রের চারটি মৌলিক প্রক্রিয়া (অপারেশন ) প্রতীক হল যোগ, বিয়োগ, গুন্ এবং ভাগ। কিন্তু প্রাথমিক গণিতে ছাত্রছাত্রীদের সাথে, সর্বপ্রথমে গণিতের প্রথম মৌলিক গাণিতিক প্রক্রিয়া যোগের পরিচয় করানো হয়। যোগ হল দুই বা দুইয়ের বেশি বস্তুকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া। যোগকে ” + ” প্রতীক দিয়ে সূচিত করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ , যদি আমাদের প্রশ্ন করা হয় রামের কাছে 2 টি আম আছে , পরে তার মা তাকে আরও 2 টা আমি দিল। বলো দেখি রামের কাছে এখন কতগুলি আম আছে ? এই ক্ষেত্রে আমরা রামের আম এবং তার মায়ের দেওয়া আমকে একত্রিত করে গণনা করে দেখব। রামের কাছে 2 টি , তার মা দিল 2 টি , মোট 4 টি। অর্থাৎ রামের কাছে এখন মোট 4 টি আম আছে।

অর্থাৎ , দুই বা দুই এর বেশি বস্তুকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া কে যোগ বলা হয়। যেমন : 1 ও 2 কে যোগ করলে 3 হয়। অর্থাৎ 1 টি বস্তু এবং 2 বস্তু মিলিয়ে মোট 3 টি বস্তু হয়।

যোগ কাকে বলে – বৈশিষ্ট্য, ধারণা, উদাহরণ, বিভিন্ন অংশ এবং যোগ করার নিয়ম?

আজকে এই টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে যোগ কাকে বলে, যোগের প্রতীক, যোগের বিভিন্ন অংশ, বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ, যোগ করার নিয়ম এবং সংখ্যারেখায় যোগ কিভাবে কিভাবে করতে হয়। এই বিষয় গুলো নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।

যোগ কি – What is Addition in Bengali ?

যোগ হল গণিতে ব্যবহৃত একটি প্রাথমিক মৌলিক প্রক্রিয়া। যোগ করার পর যে ফল পাওয়া যায় তাকে যোগফল বলা হয়। উপরে আমরা জেনেছি , দুই বা দুই এর বেশি সংখ্যা কে একত্রিত করার প্রক্রিয়া হল যোগ। যেমন : যদি আমরা 3 ও 4 সংখ্যা দুটিকে যোগ করি , তবে যোগফল 7 হবে।

ঠিক এই ভাবে বাচ্চারা শিখতে পারে দুই বা তার বেশি সংখ্যার যোগ কিভাবে করতে হয়। এই যোগ প্রক্রিয়া শিক্ষার পর ছাত্র ছাত্রীরা উঁচু ক্লাসে গুন্ এবং ভাগের মতো জটিল প্রক্রিয়া খুব সহজে শিখতে পারে। তাই এই যোগ প্রক্রিয়াটি বাচ্চাদের সবার আগে শেখানো উচিত।

যোগ কাকে বলে – Addition Definition in Bengali ?

দুই বা দুই এর বেশি সমান অথবা অসমান সংখ্যাকে একত্রিত করে একটি সংখ্যায় পরিণত করার প্রক্রিয়াকে যোগ বলা হয়।

যেমন : 2 + 3 = 5, এখানে 2 এবং 3 দুটি সংখ্যাকে একত্রিত করে ওপর একটি সংখ্যা 5 করা হয়েছে। অর্থাৎ 2 ও 3 এর যোগফল 5.

যোগের উদাহরণ – Examples of Addition

নিম্নে যোগের কিছু উদাহরণ দেওয়া হল-

  • 2 +3 = 5,
  • 12+ 13 = 25,
  • 2 ঘন্টা + 1 ঘন্টা = 3 ঘন্টা,
  • 2 টি আম + 2 টি আম = 4 টি আম ,
  • রামের কাছে 5 টি কলম আছে। তার বাবা তাকে 6 টি কলম দিয়েছে। রামের কাছে এখন কয়টি কলম আছে ?
  • উত্তর : 5 টি কলম + 6 টি কলম = 11 টি কলম। অতএব রামের কাছে এখন 11 টি কলম আছে।

যোগের চিহ্ন – Symbol of Addition

গণিতে অংক করার সময় আমরা বিভিন্ন ধরণের প্রতীকের সম্মুখীন হয়ে থাকি। অর্থাৎ গণিতে প্রতীকের সংখ্যা অসংখ্য। যোগের প্রতীকটি গণিতে ব্যবহৃত প্রতীকগুলির মধ্যে একটি। যোগ করার জন্য ব্যবহৃত প্রতীক বা চিহ্নটি হল ” + “ . এই চিহ্নটিকে যোগের চিহ্ন বা Plus sign বলা হয়।

” + “ চিহ্নটিকে দুটি বস্তুকে একত্রিত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন : 2 টি আইফোন + 3 টি আইফোন = 5 টি আইফোন। যখন আমরা অনেক বড়ো বড়ো সংখ্যা বা বস্তুকে একত্রে যোগ করি, তখন সিগমা ( Σ ) প্রতীক ব্যবহার করে থাকি।

যোগের কয়টি অংশ ও কি কি ?

যোগের কয়টি অংশ ও কি কি ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা একটা ছোট উদাহরণের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো। যেমন : 2 + 3 = 5, এখানে 2 ও 3 এর যোগ করার সময় 2, 3 ও 5 তিনটি সংখ্যা এবং দুটি প্রতীক + ও = ব্যবহার করেছি। কিন্তু + কে আমরা যোগের প্রতীক হিসাবে এবং = চিহ্নটি সমান বোঝাতে ব্যবহার করি।

উপরিউক্ত উদাহরণে আমরা 2 এর সঙ্গে 3 যোগ করেছি এবং যোগ করার পর ফলস্বরূপ 5 পেয়েছি। যোগের মূল তিনটি অংশ 2 (যোজ্য), 3 (যোজক) এবং 5 (যোগফল) অতএব আমরা বলতে পারি যোগের 3 টি অংশ। যথা –

  1. যোজ্য,
  2. যোজক এবং
  3. যোগফল।

যোজ্য কাকে বলে ?

যে সংখ্যার সাথে যোগ করা হয়, তাকে যোজ্য সংখ্যা বলে। যেমন : 2 + 3 = 5, এখানে 2 এর সাথে যোগ করা হয়েছে , সেহেতু যোজ্য = 2.

যোজক সংখ্যা কাকে বলে ?

যে সংখ্যা দিয়ে যোগ করা হয় ,তাকে যোজক সংখ্যা বলা হয়। যেমন : 2 + 3 = 5, এখানে 2 কে 3 দিয়ে যোগ করা হয়েছে , সেহেতু যোজক = 3

যোগফল কাকে বলে ?

যোজ্য কে যোজক দিয়ে যোগ করার পর যে ফল পাওয়া যায়, তাকে যোগফল বলে। যেমন : 2 + 3 = 5, এখানে যোজ্য 2 কে যোজক 3 দিয়ে যোগ করার পর 5 পাওয়া গিয়েছে। সেহেতু , যোগফল = 5.

যোজ্য, যোজক এবং যোগফল নির্ণয়ের সূত্র ?

যোজ্য, যোজক এবং যোগফলের সংজ্ঞা থেকে জানতে পেরেছি , যে সংখ্যার সাথে যোগ করা হয় , সেটি যোজ্য। যে সংখ্যা দিয়ে যোগ করা হয় তাকে যোজক এবং এদের যোগ করার পর প্রাপ্ত ফলকে যোগফল বলা হয়। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে।

এদের সংজ্ঞার মধ্যে যোজ্য, যোজক এবং যোগফল নির্ণয়ের সূত্রগুলি বিদ্যমান। যোজ্য, যোজক এবং যোগফল নির্ণয়ের সূত্রগুলি নিম্নে তুলে ধরা হল –

যোগফল নির্ণয়ের সূত্র : যোগফল নির্ণয়ের সূত্র টি হল, যোগফল = যোজ্য + যোজক

প্রশ্ন: যোজ্য 2 এবং যোজক 3 হলে , যোগফলের মান নির্ণয় কর ?

উত্তর : আমরা জানি, যোগফল = যোজ্য + যোজক = 2 + 3 = 5

যোজ্য নির্ণয়ের সূত্র : যোজ্য নির্ণয়ের সূত্র টি হলো, যোজ্য = যোগফল – যোজক।

প্রশ্ন: যোগফল 8 এবং যোজক 3 হয়, তবে যোজ্য এর মান নির্ণয় কর ?

উত্তর : আমরা জানি, যোজ্য = যোগফল – যোজক = 8 – 3 = 5

যোজক নির্ণয়ের সূত্র : যোজক নির্ণয়ের সূত্র হলো : যোজক = যোগফল – যোজ্য।

প্রশ্ন: যোগফল 8 এবং যোজ্য 6 হয়, তবে যোজক এর মান নির্ণয় কর ?

উত্তর : আমরা জানি, যোজক = যোগফল – যোজ্য = 8 – 6 = 2

কিভাবে যোগের অংক করতে হয় – যোগের অংক করার নিয়ম।

যোগের ছোট ছোট অংকগুলির সমাধান খুব সহজে আমরা করতে পারি। কিন্তু অনেক বড়ো বড়ো সংখ্যাগুলির যোগ করার সময় সংখ্যাগুলিকে তাদের স্থানীয় মান অনুসারে সাজাতে হয়।

আমরা সর্বদা স্থানীয় মানের নিয়ম অনুযায়ী ডান দিক থেকে যোগ করতে শুরু করি। প্রথমে এককের , পরে দশক , শতক , হাজার ইত্যাদি ঘরের অংক গুলির যোগ পর পর করে থাকি। নিম্ন লিখিত নিয়ম অনুসরণ করে আমরা যেকোনো যোগ খুব সহজে করতে পারবো।

সর্ব প্রথমে এককের ঘরের অংক গুলির যোগ করতে হবে। যদি যোগফল 9 অথবা 9 এর কম হয় ,তবে যোগফলের এককের ঘরে বসবে।

আর যদি 9 -এর বেশি হয় তবে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তার এককের ঘরের অংক যোগফলের এককের ঘরে বসবে এবং দশকের ঘরের অংককে যোগ অংকের দশকের ঘরের অংকের সঙ্গে যোগ করতে হবে।

এই পদ্বতি বার বার অনুসরণ করে যেকোনো যোগ অংক খুব সহজে করতে পারবে। নিম্নে কয়েকটা উদাহরণের মাধ্যমে আজকে আমরা যোগের অংক করতে শিখবো।

প্রশ্নঃ যোগ করো : 1234 + 2452

উত্তরঃ নিম্নে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো প্রকারের যোগ করা যাবে। প্রথমে এককের অংক দুটির যোগফল করবো।

  • প্রথম সংখ্যার এককের অংক 4 এবং দ্বিতীয় সংখ্যার এককের অংক 2. এদের যোগফল = 4 + 2 = 6.
  • তারপর একই ভাবে দশকের অংকের যোগফল = 3 + 5 = 8.
  • তারপর শতকের অংকের যোগফল = 2 + 4 = 6.
  • একইভাবে হাজারের ঘরের অংকদুটির যোগফল = 1 + 2 = 3.

অতএব, 1234 + 2452 = ৩৬৮৬

প্রশ্নঃ যোগ করো : 3456 + 4564

উত্তরঃ

  • এককের ঘরের অংক দুটির যোগফল (4+6 = 10 ) অর্থাৎ 9 এর বেশি , সেহেতু সংখ্যাদুটির যোগফলের এককের ঘরে 0 বসাতে হবে এবং দশকের ঘরের 1 বহন করে দশকের ঘরের সঙ্গে যোগ করতে হবে।
  • দশকের ঘরের অংক দুটির যোগফল (5+6 = 11). 11 এর সঙ্গে বহন করা এক যোগ করলে 12 হয়। সেহেতু যোগফলের দশকের ঘরে 2 বসবে এবং দশকের ঘরের 1 শতকের ঘরের বহন করে যোগ করতে হবে।
  • শতকের ঘরের অংক দুটির যোগফল (4 + 5 = 9 ), 9 এর সঙ্গে বহন করা 1 যোগ করলে হয় 10 ,সেহেতু যোগফলের দশকের ঘরে 0 বসবে এবং শতকের ঘরের 1 হাজারের ঘরের জন্য বহন করে যোগ করতে হবে।
  • হাজারের ঘরের অংক দুটির যোগফল 7 এবং এর সঙ্গে বহনকৃত 1 যোগ করলে হয় 8, সেহেতু 8বসে যাবে।

সুতরাং , 3456 + 4564 = 8020

যোগের বৈশিষ্ট্য – Property of Addition

নিম্নে যোগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল –

  1. যোজ্য ও জোজোকের স্থান বিনিময় করলে ও যোগফলের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। উদাহরণস্বরূপ , 4 + 5 = 5 + 4 = 9.
  2. যদি আমরা আলাদা আলাদা ক্রমে যোগ করি অর্থাৎ এলোমেলো ভাবে যোগ করি। তবুও যোগফলের মানের কোনো পরিবর্তন হবে না। উদাহরণ , যদি 2, 3 ও 5 কে (2 + 3) + 5 অথবা 2 + (3 + 5) .যে ভাবেই যোগ করি এর মান 10 হবে।
  3. যদি কোনো সংখ্যার সঙ্গে শুন্য যোগ করা হয় , তবে যোগফল সর্বদা ওই সংখ্যাটিই হবে। যেমন : 0 + 3 = 3.
  4. দুটি সংখ্যার যোগফল সর্বদা একটি বাস্তব সংখ্যা হবে। যেমন : 4 + 6 = 10, একটি বাস্তব সংখ্যা।
  5. দুটি পূর্ণ সংখ্যার যোগফল সর্বদা একটি পূর্ণ সংখ্যা হয়। যেমন : (2 + 6) = 8, একটি পূর্ণ সংখ্যা।
  6. কখনো কখনো যোগফল যোজ্য ও যোজকের সমান হতে পারে।
  7. যোগফল কখনো যোজ্য বা যোজকের চেয়ে ছোট হতে পারে না।
  8. যদি কোনো সংখ্যার সঙ্গে তার বিপরীত সংখ্যা যোগ করা হয়। তবে যোগফল সর্বদা 0 হবে। যেমন : 5 + (-5) = 0.

বাস্তব জীবনে যোগের ব্যবহার।

এখন পর্যন্ত আমরা জেনেছি যোগ কাকে বলে , যোগের কয়টি অংশ ও কি কি ? এখন আমরা জন্য বাস্তব জীবনে যোগের ব্যবহার কি কোনো ব্যবহার রয়েছে।

নিম্নে বাস্তব জীবনে যোগের কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হল –

  • আমরা পার্সোনাল ফিনান্স যোগের ব্যবহার করে থাকি। যেমন : আমার ব্যাংকে 1000 টাকা আছে ,পরে আর ও 500 টাকা জমা করলাম ,এখন আমার একাউন্ট এ কত টাকা আছে। ইনকাম ট্যাক্স এর হিসাব করার সময় , মাসিক খরচ ইত্যাদি।
  • শপিং করার সময় আমরা যোগের ব্যবহার করে থাকি।
  • রান্না করার সময় ও আমরা যোগের ব্যবহার করে থাকি।
  • কোনো জায়গায় ট্রাভেল করার সময় , বিশেষ করে আমরা আজকে কত কিমি ট্রাভেল করলাম , মোট কত সময় লাগলো ইত্যাদি কাজে আমরা যোগের ব্যবহার করি।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা যোগের ব্যবহার করি। এখানে আমরা যোগের ব্যবহার এত করি যে বলে শেষ করা যাবে না।

যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ কি ?

যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ হল গুন্

যোগের বিপরীত প্রক্রিয়ার নাম কি ?

যোগের বিপরীত প্রক্রিয়া হল – বিয়োগ।

আশাকরি যোগ কাকে বলে, এই আর্টিকেলটি পরে যোগের অর্থ কি , যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ কি , যোগের বিপরীত প্রক্রিয়া কি এবং যোগ কাকে বলে ইত্যাদি প্রশ্ন গুলির উত্তর খুব সহজে দিতে পারবে।

Also Reads:

Leave a Comment