রেখাংশ কাকে বলে – রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং চিত্রসহ সংজ্ঞা।

রেখাংশ কাকে বলে: রেখাংশ হল রেখার এক ক্ষুদ্রতম অংশ যা ওই রেখার উপরে অবস্থিত দুটি নির্দিষ্ট স্বতন্ত্র প্রান্তবিন্দুর দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। এই নির্দিষ্ট বিন্দু দুটি রেখাংশের সীমানা নির্ধারণ করে এবং এই বিন্দু দুটিকে রেখাংশের প্রান্তবিন্দু বলা হয়। তাই রেখাংশের দুটি প্রান্তবিন্দু থাকে। প্রান্তবিন্দু দুটির মধ্যবর্তী সকল বিন্দু ওই রেখাংশের উপরে অবস্থিত।

রেখাংশকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – খোলা রেখাংশ, বদ্ধ রেখাংশ এবং অর্ধ-খোলা রেখাংশ। নিম্নে আমরা প্রত্যেক প্রকার রেখাংশের সম্মন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

রেখাংশ কাকে বলে – রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং চিত্রসহ সংজ্ঞা।

আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা রেখাংশের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। তাই আজকের টিউটোরিয়ালটি ছাত্রছাত্রীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পরে শিক্ষার্থীরা রেখাংশের সংজ্ঞা, বিভিন্ন প্রকারের রেখাংশ ও তার চিত্রসহ সংজ্ঞা, রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং রেখা ও রেখাংশের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য স্থাপন করতে পারবে। এবং রেখাংশের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে দিতে পারবে।

রেখাংশ (Line Segment) কি?

রেখাংশ কি এর্বং জ্যামিতিতে রেখাংশের ধারণা কিভাবে আসলো তা আমরা নিম্নে আলোচনা করবো।

ধরি, PQ একটি সরলরেখা। PQ সরলরেখা বলতে সাধারণত P ও Q বিন্দু দুটি যোগ করে, সেটিকে দুই দিকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রাপ্ত সরলরেখা কে বোঝায়। কিন্তু সরলরেখার প্রান্তবিন্দু না থাকাই দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায় না। অর্থাৎ, সরলরেখার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে হলে আমাদের তার প্রান্তবিন্দু দুটি জানা প্রয়োজন।

রেখাংশ কাকে বলে - রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং চিত্রসহ সংজ্ঞা।

এখান থেকেই আমাদের মনে সরলরেখার পরিমাপ করা যায় এমন অংশের দৈর্ঘ্যের প্রশ্ন ওঠে। অবশ্য PQ সরলরেখার দৈর্ঘ্য বোঝাতে আমরা প্রকৃতপক্ষে PQ রেখাংশের দৈর্ঘ্য কেই বুঝি। অন্যভাবে বলা যায় PQ রেখাংশ বলতে বোঝায় P ও Q বিন্দু দ্বারা সীমাবদ্ধ PQ সরলরেখার অংশকে বোঝায়।

রেখাংশ কাকে বলে?

রেখাংশের সংজ্ঞা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকে। নিম্নে রেখাংশের কিছু সংজ্ঞা দেওয়া হল –

রেখার ক্ষুদ্রতম অংশকে রেখাংশ বলে।

রেখাংশ হল রেখার একটি ক্ষুদ্রতম অংশ যা দুটি স্বতন্ত্র বিন্দু দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে।

অন্যভাবে বলা যায়, কোনো রেখার উপর দুইটি ভিন্ন বিন্দু অবস্থান করলে ওই বিন্দু দুইটি সহ তাদের মধ্যবর্তী সকল বিন্দুর সেটকে বিন্দু দুটির সংযোজক রেখাংশ বলা হয়।

রেখাংশ কতপ্রকার ও কি কি?

রেখাংশকে সাধারণত তিন ভাব্যে ভাগ করা হয়। যথা –

  • বদ্ধ রেখাংশ
  • খোলা রেখাংশ
  • অর্ধ-খোলা রেখাংশ।

বদ্ধ রেখাংশ কাকে বলে?

যদি কোনো রেখাংশের মধ্যে উভয় প্রান্তবিন্দুসহ রেখাংশের উপরে অবস্থিত সকল বিন্দু থাকে তবে সেই রেখাংশকে বদ্ধ রেখাংশ বলা হয়।

বদ্ধ রেখাংশ কি তা আমরা একটি চিত্রের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করবো।

রেখাংশ কাকে বলে - রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং চিত্রসহ সংজ্ঞা।

প্রদত্ত চিত্রে, AB একটি সরলরেখাংশ।

চিত্রটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই , AB সরল রেখাংশের মধ্যে উভয় প্রান্তবিন্দু সহ মধ্যবর্তী সকল বিন্দু রয়েছে।

সুতরাং AB একটি বদ্ধ রেখাংশের উদাহরণ।

বদ্ধ রেখাংশকে [A, B] আকারে লিখে প্রকাশ করা হয়।

খোলা রেখাংশ কাকে বলে?

যদি কোনো রেখাংশের মধ্যে উভয় প্রান্তবিন্দু ছাড়া রেখাংশের উপরে অবস্থিত সকল বিন্দু থাকে তবে সেই রেখাংশকে খোলা রেখাংশ বলা হয়।

খোলা রেখাংশ কে আমরা একটি চিত্রের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করবো।

রেখাংশ কাকে বলে - রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং চিত্রসহ সংজ্ঞা।

প্রদত্ত চিত্রে, AB একটি সরলরেখাংশ।

চিত্রটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই , AB সরল রেখাংশের মধ্যে উভয় প্রান্তবিন্দু ছাড়া সকল মধ্যবর্তী বিন্দু রয়েছে।

সুতরাং AB একটি খোলা রেখাংশের উদাহরণ।

খোলা রেখাংশকে (A, B) আকারে লিখে প্রকাশ করা হয়।

অর্ধ-খোলা রেখাংশ কাকে বলে?

যদি কোনো রেখাংশের মধ্যে প্রান্তবিন্দু দুটির মধ্যে যেকোনো একটি বিন্দু থাকে তবে সেই রেখাংশকে অর্ধ-খোলা রেখাংশ বলা হয়।

অর্থাৎ, যদি AB সরলরেখাংশের দুটি প্রান্তবিন্দু যথাক্রমে A ও B হয় এবং AB সরলরেখাংশের মধ্যে A ও B বিন্দু দুটির মধ্যে যেকোনো একটি উপস্থিত থাকে। তবে সেই রেখাংশকে অর্ধ-খোলা রেখাংশ বলা হয়।

অর্ধ-খোলা রেখাংশ কে আমরা একটি চিত্রের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করবো।

রেখাংশ কাকে বলে - রেখাংশের বৈশিষ্ট্য এবং চিত্রসহ সংজ্ঞা।

প্রদত্ত চিত্রে, AB একটি সরলরেখাংশ।

চিত্রটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই , AB সরল রেখাংশে প্রান্তবিন্দু দুটির কেবলমাত্র A বিন্দুটি রয়েছে।

সুতরাং AB একটি অর্ধ-খোলা রেখাংশের উদাহরণ।

এই অর্ধ-খোলা রেখাংশকে [A, B) আকারে লিখে প্রকাশ করা হয় এবং যদি B বিন্দুটি উপস্থিত থাকে, তবে (A, B] আকারে লেখা হয়।

রেখাংশের বৈশিষ্ট্য

রেখাংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হল –

  • রেখার সঙ্গে অংশ যুক্ত হয়ে রেখাংশ হয়েছে, সুতরাং রেখার অংশকে রেখাংশ বলা হয়।
  • একটি রেখাংশের দুটি প্রান্তবিন্দু থাকে।
  • একটি রেখাংশ অঙ্কন করার জন্য দুটি বিন্দুর প্রয়োজন।
  • রেখাংশের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য থাকে অর্থাৎ নিজের ইচ্ছামতো রেখাংশের দৈর্ঘ্য হ্রাস বা বৃদ্ধি করা যাবে না।
  • রেখাংশের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায়।
  • একটি রেখাংশের দৈর্ঘ্য সর্বদা মেট্রিক এককে পরিমাপ করা হয়।

রেখাংশের ব্যবহার

রেখাংশ হল রেখার দুইপ্রান্ত বিশিষ্ট সসীম অংশ। রেখাংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার নিম্নে তুলে ধরা হল –

  • দুটি জায়গার মধ্যে দূরত্ব নির্ণয় করার জন্য রেখাংশের ব্যাবহার করা হয়।
  • রেখাংশের সাহায্যে কোণ, ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বহুভুজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের জ্যামিতিক চিত্র অঙ্কন করা হয়।
  • জিপিএস নেভিগেশান পথ নির্দেশ করতে রেখাংশের ব্যাবহার করা হয়।
  • রেখাংশের সাহায্যে কোনো বড়ো স্থাপনার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করা হয়।

রেখা ও রেখাংশের পার্থক্য

নিম্নে একটি ছকের সাহায্যে রেখা ও রেখাংশের পার্থক্য তুলে ধরা হল

রেখারেখাংশ
রেখাকে খাতা কলমে আঁকা সম্ভব নয়।রেখাংশকে খাতা কলমে আঁকা যায়।
রেখার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য নেই।রেখাংশের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে।
রেখার কোনো প্রান্তবিন্দু নেই।রেখাংশের দুটি প্রান্তবিন্দু আছে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ রেখাংশ কাকে বলে?

উত্তরঃ দুইপ্রান্ত বিশিষ্ট রেখার ক্ষুদ্রতম অংশ কে রেখাংশ বলা হয়।

প্রশ্নঃ রেখাংশের প্রান্তবিন্দুর সংখ্যা কয়টি ?

উত্তরঃ রেখার প্রান্তবিন্দু ২ টি।

প্রশ্নঃ একটি রেখাংশ অঙ্কন করার জন্য কয়টি বিন্দুর প্রয়োজন ?

উত্তরঃ একটি রেখাংশ অঙ্কন করার জন্য ২টি বিন্দুর প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment