জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যা কাকে বলে – Even and Odd Numbers

জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যা : জোড় সংখ্যা এবং বিজোড় সংখ্যা হল পূর্ণসংখ্যার সেট। যাদেরকে তাদের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য জোড় ও বিজোড় সংখ্যা হিসাবে বিভক্ত করা হয়েছে। জোড় সংখ্যা গুলি ২ দ্বারা বিভাজ্য কিন্তু বিজোড় সংখ্যাগুলি ২ দ্বারা বিভাজ্য নয়।

সকলের সুবিধার জন্য জানিয়ে রাখি পৃথিবীতে এমন কোনো সংখ্যা নেই যা জোড় ও বিজোড় উভয় হতে পারে। সংখ্যা এমন এক গাণিতিক মান যা কোনো বস্তুর পরিমান প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। আজকে এই টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে জানার চেষ্টা জোড় সংখ্যা কাকে বলে , বিজোড় সংখ্যা কাকে বলে , উদাহরণ এবং বৈশিষ্ট্য।

জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যা কাকে বলে – Even and Odd Numbers in Bengali

জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যা বলতে কি বোঝো ?

জোড় সংখ্যাকে ইংরেজিতে Even Number এবং বিজোড় সংখ্যাকে ইংরেজিতে Odd Number বলা হয়।জোড় সংখ্যাকে আমরা যুগ্ম সংখ্যা এবং বিজোড় সংখ্যাকে অযুগ্ম সংখ্যা বলে থাকি।

জোড় সংখ্যার দলকে এমন ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ,যে তাদের দুটি সমান দলে ভাগ করা যায়। অপরপক্ষে, বিজোড় সংখ্যার দলকে এমন ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাদের দুটি সমান দলে ভাগ করা যায় না।

উদাহরণ : ৬ টি আম কে সমান দুই ভাগে ভাগ করলে ৩ টি করে আম হয়। অতএব ৬ একটি জোড় বা even number . অপর পক্ষে ৫ টি আমি কে সমান দুই ভাগে ভাগ করা যায় না। অতএব ৫ একটি বিজোড় সংখ্যা বা odd number .

জোড় সংখ্যা কাকে বলে – Even number definition.

যে সকল সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করা যায় ,তাদের জোড় সংখ্যা বলা হয়। যেমন : ২, ৪, ৬,… ইত্যাদি।

অন্যভাবে , যে সকল সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না ,অর্থাৎ ভাগশেষ হিসাবে ০ থাকে। সেই সকল সংখ্যা কে জোড় সংখ্যা বলা হয়। যেমন – ২, ৪, ৬, ৮, .. ইত্যাদি সংখ্যা কে দুই দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হিসাবে শুন্য থাকে।

জোড় সংখ্যার উদাহরণ

জোড় সংখ্যার কিছু উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হল –

  • ধনাত্মক জোড় সংখ্যা : ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, .. ইত্যাদি ধনাত্মক জোড় সংখ্যার উদাহরণ।
  • ঋণাত্মক জোড় সংখ্যা : -২, -৪, -৬, -৮, -১০, -১২ ,.. ইত্যাদি ঋণাত্মক যুগ্ম সংখ্যার উদাহরণ।
  • শূন্য : ০ একটি যুগ্ম সংখ্যা।
  • একটি চেয়ার বা টেবিলের পায়ের সংখ্যা ৪ টি একটি যুগ্ম সংখ্যার উদাহরণ।
  • একটি গাড়ির চাকার সংখ্যা ৪ টি ,একটি জোড় সংখ্যা।

Also Read: বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি কি (Binary Number System) – ইতিহাস ও আবিষ্কারক।

বিজোড় সংখ্যা কাকে বলে – Odd number definition

যে সকল সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করা যায় না,তাদের বিজোড় সংখ্যা বলা হয়। যেমন : ৩, ৫, ৭,… ইত্যাদি বিজোড় সংখ্যা।

অন্যভাবে , যে সকল সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হিসাবে ১ থাকে। সেই সকল সংখ্যা কে বিজোড় সংখ্যা বলা হয়। যেমন – ৩, ৫, ৭, ৯, .. ইত্যাদি সংখ্যা কে দুই দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হিসাবে ১ থাকে। তাই এইগুলো বিজোড় সংখ্যা।

বিজোড় সংখ্যার উদাহরণ

বিজোড় সংখ্যার কিছু উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হল –

  • ধনাত্মক বিজোড় সংখ্যা : ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১, ১৩, .. ইত্যাদি ধনাত্মক বিজোড় সংখ্যার উদাহরণ।
  • ঋণাত্মক বিজোড় সংখ্যা : -১, -৩, -৫, -৭, -৯, -১১ ,.. ইত্যাদি ঋণাত্মক অযুগ্ম সংখ্যার উদাহরণ।
  • একটি ত্রিভুজের বাহু সংখ্যা তিনটি একটি অযুগ্ম সংখ্যার উদাহরণ।
  • মানুষের হাতের আঙুলের সংখ্যা ৫ টি , ৫ একটি অযুগ্ম সংখ্যা।

জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যার সেট

জোড় সংখ্যার সেটকে {x : x = 2m , যেখানে m ∈ Z } দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যেখানে m একটি পূর্ণসংখ্যা এবং Z হল পূর্ণ সংখ্যার সেট।

বিজোড় সংখ্যার সেটাকে {x : x = 2m-1 , যেখানে m ∈ Z } দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যেখানে m একটি পূর্ণসংখ্যা এবং Z হল পূর্ণ সংখ্যার সেট।

যুগ্ম সংখ্যা ও অযুগ্ম সংখ্যার পার্থক্য

  • জোড় সংখ্যাকে দুই দিয়ে ভাগ করা যায় কিন্তু বিজোড় সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করা যায় না।
  • যদি কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অংক জোড় হয় , তবে সংখ্যাটি জোড় সংখ্যা হবে। অপরপক্ষে , যদি কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অংক বিজোড় হয় , তবে সংখ্যাটি বিজোড় সংখ্যা হবে।

জোড় ও বিজোড় সংখ্যার বৈশিষ্ট্য

নিম্নে বিজোড় সংখ্যা ও জোড় সংখ্যার কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল –

  • দুটি জোড় সংখ্যার যোগফল সর্বদা জোড় সংখ্যা হয়।
  • দুটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল সর্বদা জোড় সংখ্যা হয়।
  • দুটি জোড় সংখ্যার বিয়োগফল সর্বদা জোড় সংখ্যা হয়।
  • দুটি বিজোড় সংখ্যার বিয়োগফল সর্বদা জোড় সংখ্যা হয়।
  • দুটি জোড় সংখ্যার গুনফল সর্বদা জোড় সংখ্যা হয়।
  • দুটি বিজোড় সংখ্যার গুনফল সর্বদা বিজোড় সংখ্যা হবে।
  • একটি জোড় ও একটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল সর্বদা বিজোড় সংখ্যা হবে।
  • একটি জোড় ও একটি বিজোড় সংখ্যার বিয়োগফল সর্বদা বিজোড় সংখ্যা হবে।
  • একটি বিজোড় এবং একটি জোড় সংখ্যার গুনফল জোড় অথবা বিজোড় উভয় হতে পারে।

Also Read: সংখ্যা পদ্ধতি কি – সংখ্যা পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি

জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যা চেনার উপায়।

যেকোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অংক দেখা আমরা বিজোড় ও জোড় সংখ্যা চিনতে পারি। নিম্নে বিজোড় ও জোড় সংখ্যা চেনার উপায় গুলি তুলে ধরা হল –

  • যদি কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অংক ০, ২, ৪, ৬, ৮ হয় ,তবে সেই সংখ্যাটি জোড় সংখ্যা হবে।
  • অন্যদিকে , যদি কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অংক ১,৩, ৫, ৭, ৯ হয়। তবে সেই সংখ্যাটি বিজোড় সংখ্যা হবে।

১ – ১০০ পর্যন্ত জোড় সংখ্যা

১ – ১০০ পর্যন্ত জোড় সংখ্যা সংখ্যাগুলি হল – ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২০, ২২, ২৪, ২৬, ২৮, ৩০, ৩২, ৩৪, ৩৬, ৩৮, ৪০, ৪২, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫২, ৫৪, ৫৬, ৫৮, ৬০, ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৮, ৭০, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৭৮, ৮০, ৮২, ৮৪, ৮৬, ৮৮, ৯০, ৯২, ৯৪, ৯৬, ৯৮, ১০০.

১ – ১০০ পর্যন্ত বিজোড় সংখ্যা

১ – ১০০ পর্যন্ত বিজোড় সংখ্যাগুলি হল – ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১, ১৩, ১৫, ১৭, ১৯, ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৩৯, ৪১, ৪৩, ৪৫, ৪৭, ৪৯, ৫১, ৫৩, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬১, ৬৩, ৬৫, ৬৭, ৬৯, ৭১, ৭৩, ৭৫, ৭৭, ৭৯, ৮১, ৮৩, ৮৫, ৮৭, ৮৯, ৯১, ৯৩, ৯৫, ৯৭, ৯৯.

‘0’ কি জোড় সংখ্যা ?

প্রশ্ন হল শূন্য জোড় না বিজোড় সংখ্যা। উত্তর হবে হাঁ , ০ একটি জোড় সংখ্যা। কারণ জোড় সংখ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী ০ কে ২ দিয়ে ভাগ করলে ০ ভাগশেষ থাকে এবং ০ , ২ এর একটি গুণিতক। সেহেতু ০ একটি জোড় সংখ্যা।

প্রথম n – সংখ্যক স্বাভাবিক জোড় সংখ্যার সমষ্টি নির্ণয়ের সূত্র

প্রথম n – সংখ্যক স্বাভাবিক জোড় সংখ্যার সমষ্টি নির্ণয়ের সূত্র হল = n (n + 1) , যেখানে n = মোট পদের সংখ্যা।

উদাহরণ ১. ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত জোড় সংখ্যার সমষ্টি নির্ণয় কর?

উত্তর : আমরা জানি ১ থেকে ১০০ এর মধ্যে মোট ৫০ টি জোড় সংখ্যা আছে।

অতএব, n = ৫০

অতএব , ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত জোড় সংখ্যার সমষ্টি = ৫০(৫০+১) = ৫০✕৫১ = ২৫৫০

উদাহরণ ২. ১ থেকে ২০০ পর্যন্ত জোড় সংখ্যার সমষ্টি নির্ণয় কর?

উত্তর : আমরা জানি ১ থেকে ২০০ এর মধ্যে মোট ১০০ টি জোড় সংখ্যা আছে।

অতএব, n = ১০০

অতএব , ১ থেকে ২০০ পর্যন্ত জোড় সংখ্যার সমষ্টি = ১০০(১০০+১) = ১০০✕১০১ =১০১০০.

আশাকরি উপরোক্ত আর্টিকেলটি পরে খুব সহজে জোড় সংখ্যা কাকে বলে , বিজোড় সংখ্যা কাকে বলে , বিজোড় ও জোড় সংখ্যার পার্থক্য , বৈশিষ্ট্য এবং প্রথম n – সংখ্যক স্বাভাবিক জোড় সংখ্যার সমষ্টি নির্ণয় খুব সহজে করতে পারবে।

Also Reads:

Leave a Comment