অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে : অমূলদ সংখ্যা হল সেই সমস্ত বাস্তব সংখ্যা যাদের ভগ্নাংশ আকারে লেখা যায় না। অর্থাৎ দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ করা যায় না। অন্যভাবে বলা যায়, অমূলদ সংখ্যা হল সেই সব বাস্তব সংখ্যা যেগুলো মূলদ সংখ্যা নয়। যেমন – √২, √৩, π ইত্যাদি।
গ্রিসের দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ পিথাগোরাসের শিষ্য হিপ্পাসাস প্রায় ৪০০ B.C. তে প্রথম অমূলদ সংখ্যা √২ এর আবিষ্কার করেন।তারা সংখ্যারেখায় মূলদ সংখ্যা ছাড়াও আরও সংখ্যার অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন। পরবর্তীকালের গণিতজ্ঞগণ বিভিন্ন অমূলদ সংখ্যার ধারণা দিয়েছেন এবং এখনও অমূলদ সংখ্যার সন্ধান চলছে।
প্রাচীন ভারতেও অমূলদ সংখ্যার সম্মন্ধে ধারণা পাওয়া গেছে। ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজ বলেছিলেন √২ এর মান যত খুশি তত ঘর।
আজকের টিউটোরিয়ালে আমরা অমূলদ সংখ্যার সম্মন্ধে বিস্তারিত ধারণা নেওয়া চেষ্টা করব। এই আর্টিকেল টি সম্পূর্ণ পড়ার পর, আশাকরি, অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে, অমুলদ সংখ্যা চিনতে, মূলদ এবং অমূলদ সংখ্যার পার্থক্য নির্নয় এবং অমূলদ সংখ্যার তালিকা তৈরি করতে পারবে।
অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে – অমূলদ সংখ্যা চেনার উপায়।
অমূলদ সংখ্যা কি?
অমূলদ সংখ্যার ইংরেজি হল Irrational Numbers. অমূলদ সংখ্যা হল সেসব বাস্তব সংখ্যা যেগুলোকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতের আকারে প্রকাশ করা যায় না।
অমূলদ সংখ্যাকে দশমিক-এ প্রকাশ করার চেষ্টা করলে দশমিকের পর যত ঘর অবধি দেখা হয় না কেন , কোন পৌনঃপুনিকতা দেখা যাবে না।
অর্থাৎ একটি অমূলদ সংখ্যার দশমিকের বিস্তারের সমাপ্তি বা পুনরাবৃত্তি হয় না।
যেমন : √২ একটি সংখ্যা যাকে ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করার চেষ্টা করলে হয় √২/১, লক্ষ্য করলে দেখা যায় ১ পূর্ণ সংখ্যা হলেও √২ পূর্ণ সংখ্যা নয়। সেহেতু √২ একটি অমূলদ সংখ্যা।
অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে – Definition of irrational Numbers
যে সকল সংখ্যা কে p/q আকারে প্রকাশ করা যাবে না ,যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ ০ তাদের অমূলদ সংখ্যা বা Irrational Number বলা হয়।
যেমন : √২, √৩, √৫, ∛২, ∛৩, ∛৫, …, ০.১০১১০১১১০১১১১০… ইত্যাদি অমূলদ সংখ্যার উদাহরণ।
অমূলদ সংখ্যার উদাহরণ – Examples of irrational numbers
- √২, √৩, √৫, …. ইত্যাদি সংখ্যাগুলি অমূলদ সংখ্যার উদহারণ। কারণ এদেরকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় না , যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ ০.
- 𝝿 একটি অমূলদ সংখ্যার উদহারণ। কারণ 𝝿 এর মান ২২/৭ , 𝝿 এর প্রকৃত ম্যান নয়। ২২/৭ এর দশমিক বিস্তার ৩.১৪১৫৯২৬৫… এর সমাপ্তি বা পুনরাবৃত্তি হয় না।তাই 𝛑 একটি অমূলদ সংখ্যা কিন্ত ২২/৭ একটি মূলদ সংখ্যা।
- অয়লারের সংখ্যা e একটি অমূলদ সংখ্যার উদাহরণ। e = ২.৭১৮২৮১…..
অমূলদ সংখ্যার সেট
আমরা মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা মিলিয়ে বাস্তব সংখ্যার সেট গঠিত হয়। বাস্তব সংখ্যাকে R দিয়ে এবং মূলদ সংখ্যাকে Q দিয়ে চিহ্নিত করে থাকি।
সেহেতু বাস্তব সংখ্যা থেকে মূলদ সংখ্যার সেট বিয়োগ করলে বাস্তব সংখ্যার সেট পাওয়া যাবে। অতএব আমরা অমূলদ সংখ্যাকে R – Q অথবা Q’ দিয়ে চিহ্নিত করতে পারি। অনেকে অমূলদ সংখ্যাকে T দিয়ে চিহ্নিত করে থাকে।
আমরা জানি ,অসীম সংখ্যক অমূলদ সংখ্যা রয়েছে। তাই আমরা একটা বন্ধনীর মধ্যে অমূলদ সংখ্যার সেটকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব নয়।
নিম্নে অমূলদ সংখ্যার কিছু উপসেট তুলে ধরা হল –
- যেকোনো মৌলিক সংখ্যার বর্গমূল একটি মূলদ সংখ্যা। যেমন : √২, √৩, √৫, √৭, √১১, √১৩ ,… ইত্যাদি।
- যে সমস্ত সংখ্যা পূর্ণবর্গ সংখ্যা নয় ,তাদের বর্গমূল অমূলদ সংখ্যা। উদাহরণ : √৬, √৮, √১২, √১০,…. ইত্যাদি।
- কিছু বিখ্যাত অমূলদ সংখ্যা হল অয়লার সংখ্যা , গোল্ডেন রেশিও এবং পাই। যেমন : e, 𝝅 ,.. ইত্যাদি।
অমূলদ সংখ্যার বৈশিষ্ট্য
অমূলদ সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে তুলে ধরা হল –
- অমূলদ সংখ্যার দশমিক বিস্তার অসীম বা পুনরাবৃত্তি হয় না।
- দুটি অমূলদ সংখ্যার যোগফল সর্বদা অমূলদ সংখ্যা হয়।
- দুটি অমূলদ সংখ্যার বিয়োগফল সর্বদা অমূলদ সংখ্যা হয়।
- দুটি অমূলদ সংখ্যার গুনফল মূলদ অথবা অমূলদ হয়।
- দুটি অমূলদ সংখ্যার ভাগফল সর্বদা অমূলদ সংখ্যা হয়।
- একটি অমূলদ এবং একটি মূলদ সংখ্যার গুনফল মূলদ অথবা অমূলদ উভয় হতে পারে।
- যেকোনো দুটি অমূলদ সংখ্যার লসাগু থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
অমূলদ সংখ্যা চেনার উপায়
আমরা জানি , মূলদ সংখ্যা গুলিকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় কিন্তু অমূলদ সংখ্যাগুলিকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় না। যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ ০। উদাহরণ : √২, √৩ হল অমূলদ সংখ্যা।
নিম্নে আমি তোমাদের অমূলদ সংখ্যা চেনার তিনটি নিয়ম বলবো ,যদি এই তিনটি নিয়ম মনে রাখতে পারো। তবে যেকোনো অমূলদ সংখ্যা খুব সহজে চিনতে পারবে।
- প্রথমে দেখবে বর্গমূলের মধ্যে থাকা সংখ্যাটি কি পূর্ণবর্গ সংখ্যা না পূর্ণবর্গ সংখ্যা নয়। যদি সংখ্যাটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা না হয় ,তবে সেটি অমূলদ সংখ্যা হবে। যেমন : √২, √৩, √২০, √৩০, .. ইত্যাদি অমূলদ সংখ্যা। কিন্তু √২৫=৫, √৮১=৯ ,… ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা।
- যে সকল সংখ্যার দশমিক বিস্তার অসীম ও পুনরাবৃত্তি নয় ,সেই সব সংখ্যা মূলদ সংখ্যা হবে।কারণ কেবলমাত্র অসীম এবং অপুনরাবৃত্ত দশমিক সংখ্যাগুলি অমূলদ সংখ্যা হয়। যেমন √২ = ১.৪১৪২৩৫৬২৩৭৩০৯৫…..একটি মূলদ সংখ্যা কিন্তু ১/৭ = ০.১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭…..এই সংখ্যাটিতে ১৪২৮৫৭ বার বার পুনরাবৃত্তি করছে ,সেহেতু ১/৭ একটি মূলদ সংখ্যা।
- যেকোনো মৌলিক সংখ্যার বর্গমূল একটি মূলদ সংখ্যা। যেমন : √২, √৩, √৫, √৭, √১১, √১৩ ,… ইত্যাদি।
অমূলদ সংখ্যার তালিকা
নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিখ্যাত অমূলদ সংখ্যা ও তার মানের তালিকা তুলে ধরা হলো –
অমূলদ সংখ্যা | মান |
𝛑 | 3.141592…… |
e | 2.71828….. |
√2 | 1.414235…… |
√3 | 1.73205……… |
√5 | 2.236067…. |
√7 | 2.645751……. |
√11 | 3.316624…… |
-√3/2 | -0.866025…… |
√13 | 3.605551……. |
মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে
যে সকল সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় ,যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ ০ ,তাদের মূলদ সংখ্যা বলা হয়।যেমন : ০, ২, ৩, ৪, ১, ৫, ৬, ৭, ৮….ইত্যাদি। যে সকল সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় না ,যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ ০ ,তাদের অমূলদ সংখ্যা বলা হয়। যেমন : √২, √৩, √৫,..,..ইত্যাদি।
𝛑 কি মূলদ সংখ্যা ?
হাঁ , 𝛑 একটি অমূলদ সংখ্যা।
নিচের কোনটি অমূলদ সংখ্যা ?
০, ২২/৭, ০.২, 𝛑, √7
𝛑 ও √7 অমূলদ সংখ্যা