রেখা কাকে বলে কত প্রকার ও কিকি ? বিস্তারিত ধারণা

রেখা কাকে বলে: রেখা (Line) হল সীমাহীন একমাত্রিক জ্যামিতিক চিত্র। রেখাকে আমরা অসংখ্য বিন্দুর সমষ্টি হিসাবে চিন্তা করতে পারি। অর্থাৎ, অসংখ্য বিন্দু মিলিত হয়ে একটি রেখা গঠন করে।

অন্যভাবে বলতে পারি, একটি বিন্দুর চলার পথকে রেখা বলা হয়। পথটি টি যদি সোজা বা সরল হয় , তখন তাকে সরলরেখা এবং পথটি বাঁকা হলে তাকে বক্ররেখা বলা হয়। বিষয়টি আমরা একটা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করবো।

প্রথমে তোমার বইয়ের যেকোনো একটি পৃষ্ঠা খুলবে। যেহেতু এটি একটি তল, সুতরাং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে যদি আমরা দৈর্ঘ্যকে স্থির রেখে প্রস্থকে ক্রমশ ছোট করতে থাকি। তবে একটা সময় প্রস্থ শূন্য হয়ে যাবে এবং পৃষ্ঠার কেবলমাত্র একটি মাত্রা দৈর্ঘ্য পরে থাকবে। এই অবস্থায় বই এর পৃষ্ঠা একটি রেখায় পরিণত হবে।

রেখা কাকে বলে কত প্রকার ও কিকি – বিস্তারিত ধারণা

আজকে এই টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে আমরা রেখা কাকে বলে, রেখা কত প্রকার ও কি কি, সরল রেখা কাকে বলে, বক্র রেখা কাকে বলে, রেখার বৈশিষ্ট্য, রেখাংশ ও রশ্মি ইত্যাদি বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।

রেখা কাকে বলে ?

রেখার সংজ্ঞা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকে নিম্নে এইরকম কিছু সংজ্ঞা তুলে ধরা হল –

সীমাহীন একমাত্রিক জ্যামিতিক চিত্রকে রেখা (Line) বলা হয়। সংজ্ঞা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে রেখার মাত্রা একটি।

অন্যভাবে বলা যায়, একটি বিন্দুর চলার পথকে রেখা বলা হয়। সুতরাং,রেখার কোনো প্রান্ত বিন্দু নেই।

উপরের এই সংজ্ঞাগুলি থেকে আমরা নিচের মতো করে রেখার সংজ্ঞা দিতে পারি।

যে জ্যামিতিক চিত্রের কেবল দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু প্রস্থ ও উচ্চতা নেই তাকে রেখা (line) বলে।

রেখা কাকে বলে

প্রদত্ত চিত্রে PQ একটি রেখার উদাহরণ যার কোনো প্রান্তবিন্দু নেই।

রেখা অঙ্কন করার নিয়ম?

রেখার ধারণা একটি কাগজে লিখে দেখানো সম্ভব নয়। তবুও নিম্নলিখিত উপায়ে আমরা একটি রেখার মডেল তৈরী করতে পারি। একটি রেখা অঙ্কন করার জন্য নিচে দেওয়া ধাপগুলি অনুসরণ করবে।

  • প্রথমে এক টুকরো সাদা কাগজ ও একটি পেনসিল নিবে।
  • তারপর সাদা কাগজের উপরে দুটি বিন্দু নিবে।
  • তারপর পেন্সিল দিয়ে বিন্দু দুটিকে যুক্ত করবে।
  • বিন্দু দুটি যুক্ত করার পর একটি হালকা লম্বা চিহ্ন তৈরী হবে।
  • এই হালকা লম্বা চিহ্নটি একটি রাখার চিত্র।

যদি বিন্দু দুটি যুক্ত করার সময় পেন্সিলের অগ্রভাগ দিক পরিবর্তন করে তবে সেটি বক্র রেখা এবং দিক পরিবর্তন না করলে সেটি সরলরেখা হবে।

রেখা কাকে বলে

প্রদত্ত PQ সরলরেখা অঙ্কন করার জন্য প্রথমে সাদা কাগজের উপরে দুটি বিন্দু P ও Q নিয়েছি। তারপর স্কেল ও পেন্সিলের সাহায্যে P ও Q বিন্দু দুটি যুক্ত করলাম। এইভাবে PQ রেখাটি অঙ্কন করা হয়েছে। যেহেতু বিন্দু দুটি যুক্ত করার সময় কোনো দিক পরিবর্তন করা হয়নি, সেহেতু PQ একটি সরলরেখা।

রেখার বৈশিষ্ট্য

রেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হল –

  • রেখা একটি একমাত্রিক জ্যামিতিক চিত্র।
  • রেখার কেবলমাত্র দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু প্রস্থ ও উচ্চতা নেই।
  • একটি রেখার দৈর্ঘ্য অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • যেকোনো রেখাকে উভয় দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তারিত করা যায়।
  • রেখার কোনো শেষ বিন্দু নেই।
  • পরস্পর ছেদী রেখা গুলি একেঅপরকে কেবলমাত্র একটি বিন্দুতে ছেদ করে।
  • দুটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে দূরত্ব সর্বদা একই থাকে।
  • একটি রেখার অসংখ্য সমাধান রয়েছে।

রেখা কত প্রকার ও কি কি?

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি রেখার সংজ্ঞা ও রেখা অঙ্কন করার নিয়ম। এখন আমরা জানবো রেখা কত প্রকার ও কি কি ? রেখাগুলিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

যথা:-

  1. সরলরেখা
  2. বক্ররেখা

এছাড়া ও বিভিন্ন প্রকারের রেখা রয়েছে যেমন – অনুভূমিক রেখা (Horizontal line), উলম্ব রেখা (Vertical line) Parallel lines (সমান্তরাল রেখা), লম্ব রেখা (Perpendicular lines), ছেদক (Intersecting line) ইত্যাদি। প্রতিটি রেখার চিত্র সহ সংজ্ঞা নিম্নে আলোচনা করা হবে।

সরলরেখা কাকে বলে ?

যে রেখার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কোনো দিক পরিবর্তন করতে হয় না তাকে সরলরেখা বলা হয়। একটি সরলরেখা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং একটি বিন্দু টিকে অন্য কোনো বিন্দুতে যাওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করে না।

রেখা কাকে বলে

প্রদত্ত রেখাটি P বিন্দু থেকে Q বিন্দুতে যাওয়ার সময় কোনো দিক পরিবর্তন করেনি। সুতরাং, PQ একটি সরলরেখা।

বক্ররেখা কাকে বলে ?

যে রেখা কে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দিক পরিবর্তন করতে হয় তাকে বক্ররেখা বলে।

অর্থাৎ একটি বক্র রেখা আঁকাবাঁকা পথে অসীম পর্যন্ত বিসতৃত এবং এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যাওয়ার সময় বারবার দিক পরিবর্তন করে।

বক্ররেখা কাকে বলে

প্রদত্ত চিত্রে CD একটি বক্ররেখার উদাহরণ।

অনুভূমিক রেখা (Horizontal line)

অনুভূমিক রেখা হল একটি সরল রেখা যা ডানদিক থেকে বামে বা বামদিক থেকে ডানদিকে আঁকা হয়। অনুভূমিক এর ইংরেজি হল Horizontal Line. Horizontal শব্দ টি “Horizon” থেকে নেওয়া হয়েছে যার বাংলা অর্থ “দিগন্ত” দিগন্ত হল সমতল রেখা যা পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষকের কাছে পৃথিবী এবং আকাশকে বিভক্ত করে।

রেখা কাকে বলে

PQ রেখাটি একটি অনুভূমিক রেখা (Horizontal line) উদাহরণ।

উলম্ব রেখা (Vertical line)

উল্লম্ব রেখা (Vertical Line) এমন এক প্রকারের রেখা যা সর্বদা উপরে থেকে নীচে অথবা নীচে থেকে উপরে অঙ্কন করা হয়।

অর্থাৎ যে রেখা গুলি নিচে থেকে উপরে অথবা উপর থেকে নিচে অঙ্কন করা হয় তাদের উলম্ব রেখা বা Vertical Line বলা হয়।

রেখা কাকে বলে

সমান্তরাল রেখা (Parallel lines)

একই সমতলে অবস্থিত দুই বা তার বেশি রেখা দুদিকে অসীম পর্যন্ত বৃদ্ধি করলেও যদি তারা পরস্পর মিলিত না হয় , তখন তাদের সমান্তরাল রেখা বলা হয়। দুটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে লম্ব দূরত্ব সর্বদা সমান হয়।

রেখা কাকে বলে কত প্রকার ও কিকি - বিস্তারিত ধারণা

লম্ব রেখা (Perpendicular lines)

যদি একটি রেখার উপর অন্য একটি রেখা লম্বভাবে দন্ডায়মান হয়ে ৯০ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন করে তখন ওই রেখা দুটিকে লম্ব রেখা বা Perpendicular Line বলা হয়।

রেখা কাকে বলে কত প্রকার ও কিকি ? বিস্তারিত ধারণা

পরস্পর ছেদি রেখা (Intersecting line)

যদি দুই বা ততোধিক রেখা একটি বিন্দুতে একেঅপর কে ছেদ করে তবে সেই রেখাগুলিকে পরস্পরছেদী রেখা বা Intersecting Line বলা হয়। রেখাগুলি যে বিন্দুতে একেঅপরকে ছেদ করে সেই বিন্দু কে ছেদবিন্দু বা Intersecting Point বলা হয়।

রেখা কাকে বলে কত প্রকার ও কিকি - বিস্তারিত ধারণা

এখানে উল্লেখ করে রাখি যে রেখাগুলি যেকোনো কোণে একেঅপরকে ছেদ করতে পারে।

সরলরেখা ও বক্ররেখার পার্থক্য

সরল রেখা ও বক্ররেখার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হল –

সরলরেখাবক্ররেখা
সরলরেখা সর্বদা সোজা পথে চলে।বক্ররেখা সর্বদা আঁকাবাঁকা পথে চলে।
সরলরেখা এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যাওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করে না।বক্ররেখা এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যাওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করে।
সরলরেখার সাহায্যে বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র, সামান্তরিক ইত্যাদি অঙ্কন করা হয়।বক্ররেখার সাহায্যে বৃত্ত, উপবৃত্ত, অধিবৃত্ত ইত্যাদি অনেক্ষন করা হয়।
দুটি সরল রেখা একেঅপরকে সর্বোচ্চ একটি বিন্দুতে ছেদ করে।দুটি বক্ররেখা একেঅপরকে অসংখ্য বিন্দুতে ছেদ করে।
সরলরেখা ও বক্ররেখার পার্থক্য

রেখার ব্যবহার

রেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার নিম্নে তুলে ধরা হল –

  • রেখার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরণের জ্যামিতিক চিত্র তৈরী করি।
  • ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস, সামান্তরিক, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ ইত্যাদি জ্যামিতিক আকার আমরা সরলরেখার সাহায্যে অঙ্কন করে থাকি।
  • বৃত্ত, উপবৃত্ত, অধিবৃত্ত ইত্যাদি জ্যামিতিক আকার বক্ররেখার সাহায্যে অঙ্কন করা হয়।
  • কোনো দেশের সীমানা নির্ধারণ করার সময় রেখার ব্যবহার করা হয়।
  • জমির পরিমাপ করার সময় রেখা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • এছাড়াও রেখার সাহায্যে শিল্পীরা নিজস্ব রেখাচিত্র তৈরী করে থাকে।

আশাকরি এই আর্টিকেলটি সপূর্ণ পড়ার পর রেখার সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত ছোটো থেকে বড়ো সব ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে দিতে পারবে। এবং খুব সহজে যে কোনো প্রকারের রেখার চিত্র অঙ্কন করতে পারবে।

তারপরও যদি কোনো সমস্যা হয় তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। ধন্যবাদ। …..

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment